ঐক্যবদ্ধ জাতিই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে : তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:১০ এএম, ২৯ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে বাংলাদেশের মানুষের যে আশা ও প্রত্যাশা তা পূরণ করতে সক্ষম হবো। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনও বিকল্প নেই। আমরা কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছি, কিন্তু এর বাইরেও অনেক কাজ করতে হবে। দেশে রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির পথও বের করে হবে। যদি আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে পারি তাহলে আমরা অর্থনৈতিকসহ সবদিক থেকেই মুক্তি পেতে সফল হবো।
আজ শনিবার সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ঐতিহাসিক স্মরণ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় কয়েক কিলোমিটার দূরে চৌহালী উপজেলা থেকে ট্রলার এবং ছোট ছোট নৌকা দিয়ে যুমুনা নদী পার হয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মী এ স্মরণসভায় যোগ দেন। এছাড়াও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নৌকাপথে, সড়কপথে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এতে অংশগ্রহণ করেন। এ স্মরণসভাকে কেন্দ্র করে যমুনা সেতু থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত লাগানো হয়েছে অসংখ্য তোরণ, ব্যানার এবং ফেস্টুন।
তারেক রহমান বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি, মূলত বাংলাদেশের মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ যারা আছেন এই মানুষগুলোর মধ্যে অনেককেই আমরা হারিয়েছি, অনেকেই শারীরিকভাবে আহত হয়েছেন তাদের সবার আত্মত্যাগের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, স্বৈরাচারকে বিদায় করেছি, অল্প লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। সামনে আরও অনেক পথ বাকি আছে। সেই পথ পাড়ি দিতে পারলে, মানুষের ভোটের অধিকারও নিশ্চিত হবে। তিনি বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুরের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা যদি এই এলাকার দিকে তাকাই তাহলে আমরা সম্ভাবনাময় একটি এলাকা দেখতে পাই। সিরাজগঞ্জের নাম আসলেই সামনে ভেসে ওঠে তাঁত শিল্পের কথা। এই পেশার সাথে অসংখ্য মানুষ যুক্ত। এর আগেও কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কৃষি ঋণ মওকুফসহ অনেককিছু করেছিলেন। আমার ইচ্ছা, বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে এই তাঁতশিল্পের পাশে এসে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। সারা পৃথিবীর নানান প্রান্তে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের মাধ্যমে এই শিল্পকে কিভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা আমরা করব।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চৌহালীর চীনা-বাদামকে ছড়িয়ে দেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, কেন এই কৃষকদের পাশে সরকার দাঁড়াবে না, কেন এই চীনা-বাদাম ছড়িয়ে দেওয়া হবেনা। আমরা চেষ্টা করব এই চীন-বাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে। তখন বৃহৎ আকারে চাষ হলে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বাংলাদেশের রসুনকেও রপ্তানি করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি বগুড়া যাওয়ার সময় সিরাজগঞ্জে মাঠের পর মাঠ হলুদে ঢাকা দেখতাম। এই সরিষাও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, আমি বিভিন্ন সময চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের গ্রামের মানুষগুলোর কাছাকাছি যাবার জন্য। দেশকে স্বনির্ভর করে তুলতে সম্মেলিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ মানুষের সামনে বিপুল সম্ভাবনা। আঞ্চলিক উৎপাদন সম্ভাবনার উপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা জাতির কাছে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। এখানে অনেক কিছু আছে। আজকে যদি দেশকে এগিয়ে নিতে হয় তাহলে শুধু যে সংস্কার চেয়েছি তা করলেই হবে না, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক মুক্তিই সব সুফল বয়ে আনবে না। দেশ সামগ্রিকভাবে সম্ভাবনাময় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ দেশকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারি তাহলেই তাহলে অবশ্যই অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব।
সিরাজগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা যদি আশেপাশে তাকাই তাহলে দেখতে পাই বেলকুচি, চৌহালীর কামারখন্দের নাম আসলেই তাত শিল্পের কথা আছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে কৃষি, তাত শিল্প, পাট শিল্পকে সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো। বিএনপির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসলে বিএনপি তাঁতশিল্পের পাশে এসে দাঁড়াবে। এই শিল্পকে কিভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায় সেবিষয়ে গুরুত্ব দিবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য হাজারও ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছে। জনগণ তাদের ইচ্ছেমত ভোট প্রদান করবে। তাই কোনো দখলবাজি নয়, জনগণের মন জয় করতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে প্রতিপক্ষরা সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, বিএনপির সামনে সুূদিন। কিন্তু আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও সক্রিয়। টুকু বলেন, দীর্ঘদিন পরে প্রবাস থেকে আপনাদের সামনে এসেছি। আপনারা আমার আত্মীয়। আমাকে ষড়যন্ত্র করে আপনাদের থেকে দূরে রেখেছে। আমি দ্রুতই আসবো। তবে, আপনাদের প্রতি অনুরোধ কোনো দখলবাজিতে যাবেন না। কারও সম্পদের অনিষ্ট করবেন না। জনগণের পাশে থাকুন। তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেন, তাহলে জনগণই বিএনপির নিরাপত্তা দিবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে ছাত্রজনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। আন্দোলনে দেশের ছাত্রসমাজ এবং তরুণরা নিজের জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। আর এ সংগ্রামের মূল কারিগর ছিলেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বজর্নের মাধ্যমে তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন তার সিদ্ধান্তই সঠিক। সরকারের একতরফা নির্বাচনের কারণে দেশ-বিদেশে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের অবস্থান জিরোতে নেমে আসে। সম্প্রতি ভারতের গণমাধ্যমও বলেছে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে না পারাই ছিলো ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় ভ‚ল।
রিজভী বলেন, হাজারও জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে ফ্যাসিবাদের দোসরা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে নসাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত। আজকে যদি সেই খুনী ও লুটেরাদের দ্রুত বিচার করা না হয় তাহলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে প্রত্যাখিত হয়ে গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে। রাতের আধারে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। তাদের পেটুয়া বাহিনী ছাত্রলীগকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে করে সাধারণ ছাত্রদেরকে জনগণের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা করছে।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে বেলকুচি উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বনি আমিন ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জু সিকদারের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, উপদেষ্টা ডা. এমএ মুহিত, বেলকুচি উপজেলার আহবায়ক নুরুল ইসলাম গোলাম, পৌর বিএনপির আহবায়ক আলতাব প্রামাণিক, এনায়েতপুর থানা বিএনপির আহবায়ক মন্টু সরকার, চৌহালী উপজেলার সভাপতি জাহিদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ময়নাল ক্বারী, জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কায়েস, ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, মহিলা দলের সভানেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন হাসি প্রমুখ।