স্বৈরাচারের দোসরদের যড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকুন : তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৬ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:০৬ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসরদের নানামুখী যড়যন্ত্র থেকে জনগণকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত জনসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই আহবান জানান তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন, চক্রান্ত হলে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। আগামীতে বিএনপি দেশে উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি চালু করতে চায় বলেও জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই জনগণের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। দেশের জনগণের সমর্থনে আমরা সে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে সেদিনও আপনাদের সমস্যার কথা আমার মনে থাকবে।”
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার বিকেলে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ও প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
প্রায় ১৭ বছর পর গোপালপুরের এই জনসভায় উপস্থিত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হাজির হলে হাজার হাজার জনতা তাঁকে অভিবাদন জানান। প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে বেশিরভাগজুড়ে তারেক রহমান টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত নানা পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক মুক্তি হলে দেশ এগিয়ে যাবে।”
জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “গোপালপুরের আমার ভাইবোন, সন্তানতুল্য আমাদের পরের প্রজন্ম আর আমার শ্রদ্ধেয় মুরুব্বিরা আসসালামু আলাইকুম। প্রায় সতেরো বছর পর আপনারদের সামনে কথা বলছি। কেমন আছেন আপনারা সবাই। আলহামদুলিল্লাহ।” তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার দূরে থেকে আপনাদের সাথে কথা বললেও সব সময়ই আমার মন পড়ে আছে আপনাদের মাঝেই। দেশে থাকতে আপনাদের ভ‚য়াপুর, গোপালপুরের ওপর দিয়ে আমাকে প্রায়ই যেতে হতো দেশের উত্তরাঞ্চলে। সুতরাং আপনারা আমার মনের একটা বিরাট জায়গা দখল করে আছেন।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমি জানি আজ এখানে শুধু গোপালপুর আর ভূয়াপুরের জনগণই নন। পাশের মধুপুর, ধনবাড়ি, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল সদর ছাড়াও জামালপুর জেলারও অনেকেই উপস্থিত আছেন।” তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বক্তব্য তো আপনারা প্রায়ই শোনেন। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইও না। আমার পিতা আপনাদের সবার প্রাণের মানুষ; তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন- কিভাবে দেশের খেটে খাওয়া কৃষক মজুর আর সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে হয়, আর আমার মা আপনাদের সবার প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে শিখিয়েছেন মানুষের ভালোবাসা অর্জনের গুরুত্ব, শিখিয়েছেন দেশের মা-বোনের সমস্যা সমাধানে কিভাবে কাজ করতে হয়।
তারেক রহমান বলেন, “ আমি জানি টাঙ্গাইলের শাড়ি আর চমচমের কথা। যদিও টাঙ্গাইলের শাড়ির সাথে আপনাদের পাশের উপজেলা দেলদুয়ারের নাম সবাই বলে, কিন্তু আমি জানি- এই গোপালপুরেও টাঙ্গাইলের বিখ্যাত শাড়ি তৈরি হয়। এখানকার মা-বোনেরা সুতা রং করেন, সেগুলো শুকান আর মাকুতে ভরেন এবং ভাইয়ারা সেটা তাতে লাগিয়ে অসাধারণ সুন্দর শাড়ি তৈরি করেন।”
তিনি বলেন, “আপনারা তাঁতের কারখানা আরো বাড়ান, দেলদুয়ারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে। প্রতিযোগিতা করলে সবারই মান উন্নত হবে। আমি জানি সুতার দাম, রঙের দামের সাথে আপনারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। আবার ঠিকমতো বাজারজাতও করতে পারেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি কখনো আপনাদের দোয়ায় আপনাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেন, তাহলে আপনাদের সমস্যা আজ যেমন মনে করলাম ভবিষ্যতেও ভুলবো না।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘পৃথিবীর মানুষ জানে টাঙ্গাইল পৃথিবীর কোথায় অবস্থিত। তবে আমাদের গুণগতমান বাড়াতে হবে, ডিজাইনে আনতে হবে বৈচিত্র্য আর সুতি, সিল্ক এবং সুতি সিল্কের সংমিশ্রণেও নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করতে হবে। শাড়ি আমাদের মা-বোনের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। একদিন আসবে আমরা বিদেশ থেকে শাড়ি আনবো না বরং পৃথিবীর যে সব দেশে মহিলারা শাড়ি পরেন, আর যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন সেখানেও অদূর ভবিষ্যতে শাড়ির একটাই নাম থাকবে টাঙ্গাইল শাড়ি।”
তারেক রহমান বলেন, “এই এলাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো- চমচম। পৃথিবীর মানুষ জানে চমচম মানেই টাঙ্গাইল আর পোড়াবাড়ি। এখানকার দুধ আর পানি দিয়ে যে চমচম তৈরি হয়, সেটা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কিন্তু এখানেও সমস্যা, নদীতে পানি নেই, দুধের দাম চড়া আমার গরিব ভাই-বোনদের জন্য দাম সহনীয় নয়। আমরা যদি সুযোগ পাই দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা যেমন বাড়াবো, তেমনি বন্ধ খাল আর নদী আবারও খনন করবো। আর এই চমচম বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে টিনজাত হয়ে পৃথিবীর সব কোনায় পৌঁছে যাবে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমি জানি, বাংলাদেশের যে কয়টি জায়গায় এখনো পাট অন্যতম প্রধান ফসল তার মধ্যে গোপালপুর, ভূয়াপুর উল্লেখযোগ্য। একসময় এখানকার ঝিনাই, ধলেশ্বরী আর বৈরান নদী দিয়ে বড় বড় নৌযান পাট নিয়ে যেত নারায়ণগঞ্জে। আজ বাংলাদেশে পাটের দুর্দশা। এখানেও অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। পাট দিয়ে কেন শুধু বস্তা তৈরি হবে। সারাবিশ্ব আজ পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত, আমাদেরও পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পলিথিন আমাদের নদী খাল পুকুর ফসলের জমি সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। পলিথিন মাটি পানি কিছুতেই মিশে যায় না।”
তিনি বলেন, “পাটের নতুন নতুন ব্যবহার বাড়াতে হবে, আবিষ্কার করতে হবে। ব্যাগ, বোর্ড, জুতা, স্যান্ডেল, আসবাবপত্র তৈরির কাজে পাটের ব্যবহার উদ্ভাবন করতে হবে। আর পাটকাঠি দিয়ে শুধু পার্টিকেল বোর্ড নয়, এটারও নতুন নতুন ব্যবহার আবিষ্কার করতে হবে পরিবেশ বাঁচাতে। পাটের বংশ ইতিহাস বা জেনেটিক ভালো করে রপ্ত করে উন্নত মানের উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কার করতে হবে। কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিলে আমি এর একটি কথাও ভুলে যাবো না।”
তারেক রহমান বলেন, “আপনাদের পাশেই আছে মধুপুর, আমি জানি এখানে মধুপুরের অনেকেই আছেন। মধুপুরের জলডুবি আনারসের ভক্ত নয় এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটাও একটা মৌসুমি ফল, ফলে এটা সংরক্ষণ করতে না পারায় আর বহুবিধ ব্যবহার আজো সম্ভব হয়নি। অথচ পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই যে আনারসের জুস, জ্যাম, জেলী পছন্দ করে না। আমাদের এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “ধান উৎপাদনে আপনারা অপ্রতিদ্ব›দ্বী আমি জানি, আপনাদের হারানো খুবই কঠিন। তারপরও সারাদেশে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনায় আপনাদের সাহায্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার, আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, গোপালপুর আর টাঙ্গাইলের অনেক জায়গায় খুবই উন্নত মানের টুপি তৈরি হয়। রপ্তানিও হয় পৃথিবীর বহু দেশে। আপনার মক্কা শরীফের ফুটপাতে আর দোকান থেকে যে টুপি কিনে আনেন হজ ওমরার সময় সেগুলোর বেশিরভাগই এই টাঙ্গাইলে তৈরি হয়। এর উন্নতি আর বাজারজাত করতে সাহায্য করা দরকার।”
তিনি বলেন, “এখানে গরু মোটাতাজা করার অনেক ছোট বড় খামার আছে, আপনারা কোরবানির সময় গবাদিপশুর বিরাট একটা অংশ এখান থেকে পূরণ করেন। আমরা আপনাদের বিষয় মনে রাখবো, বিশেষ করে পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে আপনাদের অনেক সমস্যা আছে। এছাড়া তারেক রহমান বলেন, “ভূমিহীন মানুষের সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। এসব দিকে নজর দিতে হবে। আর সবার আরেকটি বড় সমস্যা হলো যমুনা নদীর ভাঙন, বিশেষ করে ভ‚য়াপুর উপজেলায়। এ ব্যাপারে অনেক বাস্তবমুখী আর স্থায়ী পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম টাঙ্গাইলে বিএনপির এমন জনসভা। এতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গোপালপুরের সুতি ভিএম হাইস্কুল মাঠের সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। স্লোগানে মুক্তির দাবি জানান তাদের প্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর।