ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি-আগুন
রোহিঙ্গারা আবারও ছুটছে বাংলাদেশের দিকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৯ পিএম, ১৯ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:১৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে আবারও গোলাগুলি ও রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিসংযোগের পর নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে সেখানকার রোহিঙ্গারা। শূন্যরেখার পার্শ্ববতী বাংলাদেশের বাসিন্দারাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হয়ে পড়েছে। শূন্যরেখার শিবির থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রামের দিকে ছুটছে।
গতকাল বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ৯টা পর্যন্ত এই থেমে থেমে গোলাগুলির পর রোহিঙ্গা বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ ও ঘুমধুম ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ।
এ প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুটি পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে সীমান্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক অবস্থানে আছে।
ইউএনও বলেন, কোনারপাড়া আশ্রয়শিবির ছেড়ে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে আশ্রয় নিয়েছে। আর কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ভেতর চলে গেছে। যারা বাংলাদেশের দিকে এসেছেন, তাদের অধিকাংশ নারী, বৃদ্ধা ও শিশু। তাদের বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগায় নারী, শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের সেখান থেকে তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। আবার অনেকে আশপাশের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এলাকায় বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে কোনো লোকজনকে রাস্তাঘাটে বের হতে দিচ্ছে না প্রশাসন।
রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, গোলাগুলি ও রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিসংযোগের পর তীব্র শীতের রাতে রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষেরা দিগ্বিদিক ছুটে গেছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমারের ভেতর পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রাতভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে।
ওই শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গোলাগুলিতে একজনের মৃত্যুর ঘটনার পর আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এর মধ্যে অনেকের বসতঘর পুড়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে সবাই এদিক-সেদিক ছুটছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য বলেন, শূন্যরেখার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের বসতঘরগুলোর কিছু অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। ফলে সেখানকার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দিকে পালিয়েছে। এখন পর্যন্ত নারী, শিশুসহ কয়েক শ রোহিঙ্গা এপারে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। সে সময় ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া খালের দক্ষিণে শূন্যরেখায় বসতি শুরু করে। ওই আশ্রয়শিবিরে কয়েক গজ দূরত্বে মিয়ানমার সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়চূড়ায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চৌকি স্থাপন করেছে। এর বাইরে তমব্রুর কোনারপাড়া শূন্যরেখা আশ্রয়শিবিরে ৬২১টি পরিবারে ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল।
শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ (৫৫) মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, শুরুতে শূন্যরেখার এই শিবিরে ছিল ১ হাজার ৩২১ পরিবারের ৬ হাজার ২২ রোহিঙ্গা। তাদের বাড়ি এই আশ্রয়শিবিরের পেছনে দেড় থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রাখাইন রাজ্যের ১২টি গ্রামে। বর্তমানে এই শিবিরে আছে ৬২১ পরিবারে ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা।