বিদেশিদের বক্তব্য ধর্তব্য নয়, জনগণের ভাবনাই বিবেচ্য : নির্বাচন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১২ পিএম, ২ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:২৪ পিএম, ১৪ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪
নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের বক্তব্য ধর্তব্য নয় বরং জনগণ কি ভাবছে সেটাই বিবেচ্য বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী খোলাসা করেই বলেন, নির্বাচন নিয়ে তারা (বিদেশিরা) কি বলছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী, যথাসময়ে নির্বাচন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সবার অংশগ্রহণে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং স্বচ্ছভাবে আয়োজনে নির্বাচন কশিনকে সহায়তায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে কি না এমন সম্পূরক প্রশ্নে মন্ত্রী মোমেন আরও বলেন, এটা আমাদের হেডেক (মাথাব্যথা) নয়, আপনাদের (সাংবাদিক) হেডেক।
নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের আশ্বস্ত করার কোনো দরকার নেই। আমরা আমাদের যে কাজ সেটা করে যেতে চাই। জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকলে বিদেশি, নন বিদেশি কোনো বিষয় নয়। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে যে ভুল তথ্যে যে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে তা যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্য জানিয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র, আইন এবং অন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নতুন বছরের প্রথম দিন বিভিন্ন দেশে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে মতবিনিময়ও করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশ সম্পর্কে যেকোনো ভুল তথ্য প্রচার হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে বিদেশের বাংলাদেশ মিশন এবং পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী।
মিশনপ্রধানদের ভার্চ্যুয়াল ওই সম্মেলেনে দেয়া নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে যারা দেশবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের কথা জনগণ বিশ্বাস করে না, তাই ওসব নিয়েও মাথাব্যথা নেই। তবে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বানোয়াট তথ্য দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে আমরা বিদেশে দায়িত্বরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছি।
সেখানে আমরা কূটনীতিকদের উদ্দেশে বলেছি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ অপপ্রচার ও বানোয়াট তথ্য দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে। আপনাদের এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আপনারা ব্যবস্থা নেবেন।
মন্ত্রী বলেন, মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার রোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি ‘সমন্বয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে, কমিটি এ নিয়ে কাজ করবে। প্রকৃত তথ্য ও ঘটনা তুলে ধরবে। ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনার নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- সীমান্তে কোনো লোক নিহত যেনো না হয়। এটা আমাদের কোনো ব্যর্থতা নয়। আপনাদের দেখতে হবে কেন ওই লোকটা মরল। ওটাও আপনারা খুঁজে দেখেন।’
জানা গেছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মিশনপ্রধানদের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের আরও সতর্ক ও সচেতন থাকার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা এবং বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। সেই আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে বিভিন্ন অনুবিভাগের মহাপরিচালকরাও যুক্ত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর একটি অপচেষ্টা চলছে এবং এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকার জন্য বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া নিজ নিজ দেশে রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি, মিশনে আমন্ত্রণ জানানোসহ তাদের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
আরেকটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ আকর্ষণসহ অন্য অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন। প্রায় ৩ ঘন্টার ওই আলোচনায় প্রায় ২৫ জন রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ দপ্তরের খতিয়ান তুলে ধরা ছাড়াও সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা ঢাকার বিবেচনায় উপস্থাপন করেন।