একই দিনে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪০ পিএম, ৫ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৩৩ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
একই দিনে ঢাকায় পা রাখছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং মার্কিন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে যুক্তরাষ্ট ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই শনিবার ঢাকাতে পা রাখছেন এই দুই মন্ত্রী। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও কুয়েত সফরের কথা রয়েছে মার্কিন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসনের।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাইডেন প্রশাসনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে ওয়াশিংটনের বহুপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে। এছাড়া বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা ইস্যু থাকবে আলোচনার টেবিলে।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ৬ আগস্ট সকালে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন এবং ৭ তারিখে ফিরে যাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ৭ আগস্ট সকালে তিনি বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
ওয়াং ই-এর সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং বিস্তৃত। সে জায়গা থেকে আসন্ন সফরে একাধিক সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে নবায়ন, নতুন সহযোগিতা, বিশেষ করে দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা সবসময়ই ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা চাই যে, এ ইস্যুতে পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়। কেননা বিশ্ব যথেষ্ট সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের আহ্বান হচ্ছে যে, সব পক্ষ যাতে এ ইস্যুতে সংযত আচরণ করে এবং জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলে। আমরা আশা করি যে, এই পরিস্থিতির আর অবনতি হবে না। কেননা বিশ্ব এখন নতুন সংকট বইতে পারবে না। অন্য বলয়গুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী হবে— তা আমাদের ইস্যু। আমরা চাই না আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কেউ পরামর্শ বা নির্দেশনা দিক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে চীন বাংলাদেশের একটি বন্ধু রাষ্ট্র এবং তাদের অনেক পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের সম্মতি আছে।
এদিকে মন্ত্রীর এসব বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার আগে সকালে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ঢাকার চীনা দূতাবাস। ওই বিবৃতিতে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ অব্যাহতভাবে ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলবে। চীন বিশ্বাস করে, এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য বেইজিংয়ের সঙ্গে কাজ করবে ঢাকা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও চীন ভালো প্রতিবেশী, বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার। সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভূখন্ডের অখন্ডতার মতো মৌলিক স্বার্থের বিষয়ে উভয় দেশ সবসময় একে অপরকে বোঝে এবং সমর্থন করে। ‘ওয়ান-চায়না’ নীতি ও তাইওয়ানের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সন্তুষ্টি জানায় চীন।
এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ তাইওয়ান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করার পাশাপাশি উত্তেজনা বাড়াতে পারে, এ অঞ্চল এবং এর বাইরে শান্তি-স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে, এমন কোনো কাজ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতির প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে এবং জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের মতপার্থক্য নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে।
চীনের কড়া হুঁশিয়ারির পরও ২ আগস্ট তাইওয়ানে যান যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এরপর তাইওয়ান ঘিরে সামরিক মহড়া শুরেু করে চীন।