রেলের সিন্ডিকেটের কারণেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে : হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৮ পিএম, ২১ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০১ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম ও ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়াও রেলের কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন আদালত। একই সঙ্গে আজ থেকেই ট্রেনের ছাদে যাত্রী নেয়া বন্ধ করতে মৌখিক নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়াও ট্রেনের ছাদে যাত্রী নেয়া বন্ধ, টিকিট কালোবাজারি রোধে এবং ঢাবি শিক্ষার্থী রনির ছয় দফা দাবির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী আদেশ দেবেন বলেও জানান আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে পর্যবেক্ষণ ও মৌখিক আদেশ দেন। আদালতে শুনানি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। এ সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা-যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অবস্থান ও অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করতে বলেন আদালত। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) ও মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম)-কে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে মহিউদ্দিন রনির বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে এমন তথ্য জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে জানানো হয়।
কমিটি গঠনের চিঠিতে বলা হয়, মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। তার দাবিসমূহ বাস্তবায়নে কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ওই কমিটির সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন সাতদিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। এর আগে বুধবার (২০ জুলাই) রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা-যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অবস্থানের কারণ জানতে চান হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুদক বিষয়টি জানে কি না, জানলে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাও জানতে চান আদালত। আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিককে রনির আন্দোলনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে বলেন। তারই আলোকে গতকাল রেলওয়ের দুজন পরিচালক ও সহজ ডটকমের একজন আদালতে উপস্থিত হন। তারা হলেন রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) সালাহ উদ্দিন এবং ট্রাফিক ও রেলওয়ের বাণিজ্যিক পরিচালক মো. নাহিদ হাসান খাঁন। এ ছাড়া সহজ ডটকমের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জুবায়ের হোসেন আদালতে আসেন। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক রেল কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে আদালতের আদেশের কথা জানান। এরপর গতকাল এই বিষয়ে প্রতিবেদন নিয়ে আসেন দুজন কর্মকর্তা। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে রেলের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলেন, কেন ট্রেনের ছাদে লোক ওঠে? এটা কি পয়সা ইনকামের পথ? ট্রেন জাতীয় সম্পদ। ট্রেন কি আপনারা গ্রাস করতে চাচ্ছেন? সে সময় রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক এ এম সালাউদ্দিন বলেন, মাই লর্ড এটা (যাত্রী ছাদে ওঠা) বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবু এটা আমাদের ব্যর্থতা। এ সময় আদালত বলেন, ছাদে বা দাঁড়িয়ে যারা যাচ্ছেন তারা কি টাকা দিচ্ছেন না? এটা তো দুর্নীতি। আর ছাদে যাত্রী ওঠা বন্ধ করতে পারছেন না; এই অসহায়ত্ব প্রকাশ করলে কি দেশ চলবে? এটা কোনো কথাই না। আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অসম্ভব বলে কিছু নেই। এগুলো ঠিক হতে আর কতদিন সময় লাগবে? দেশ স্বাধীনের তো ৫০ বছর হয়ে গেছে। আদালত আরও বলেন, সব ক্ষেত্রে কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবাদ করা রনির বিষয়ে জানতে চাইলে সহজ ডটকমের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জুবায়ের হোসেন আদালতকে বলেন, অনলাইনে টিকিট পেতে পেমেন্ট করতে ১৫ মিনিট সময় থাকে। কিন্তু তিনি এক ঘণ্টা পর পেমেন্ট করেছিলেন, তাই টিকিট পাননি। তবে তিনদিন পর তিনি পেমেন্ট করা টাকা ফেরত পেয়েছেন। শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, মাই লর্ড সহজ ডটকম এটা বলে পার পেতে পারে না। গতকাল ভোক্তা অধিকার তাদের অনিয়ম পেয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে, যেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা রনি পাবেন। তবে এ সময় সহজ ডটকমের ভাইস প্রেসিডেন্ট আদালতকে জানান, তারা ভোক্তা অধিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।