নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ব্যয় নিয়ে আপত্তির মুখে ইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৫ পিএম, ১২ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৫ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তখন প্রশিক্ষক হিসেবে ‘বিশেষ বক্তা’, ‘কোর্স উপদেষ্টা’সহ কয়েকটি পদ তৈরি করে সারা দেশে তিন কোটি টাকার বেশি সম্মানী ভাতা দিয়েছে ইসি। স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর বলেছে, নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য কোর্স উপদেষ্টা, বিশেষ বক্তাসহ ইসির তৈরি করা কয়েকটি পদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত নয়। ওই ভাতা প্রদানের ফলে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, সব মিলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নিরীক্ষায় প্রশিক্ষকদের পেছনে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা নিয়ে আপত্তি এসেছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় নিয়ে আপত্তি তুলেছে অডিট অধিদপ্তর। এর বাইরে প্রশিক্ষণের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করায় ২ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার ৪৭৫ টাকা নিয়েও আপত্তি তোলা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, বিশেষ বক্তার তালিকায় ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির তৎকালীন সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবেরা। ‘সুপারভাইজিং’ প্রশিক্ষক পদে ছিলেন তৎকালীন ইসির উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এ ছাড়া কোর্স মনিটরিং অফিসার, সহকারী কোর্স সমন্বয়ক, আঞ্চলিক কোর্স সমন্বয়ক, অতিরিক্ত আঞ্চলিক কোর্স সমন্বয়ক, জেলা কোর্স সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা কোর্স সমন্বয়ক নামেও পদ ছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ এবং ২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুই নির্বাচনের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনহীন পদ সৃষ্টি করে সম্মানী ভাতা প্রদানের বিষয়ে ইসি বলছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ইসির জন্য যে বরাদ্দ দেয়, তা ব্যয়ের জন্য ইসিই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ। এসব পদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রযোজ্য নয়।
নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য যে ব্যয় হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনে অনুমোদিত। অডিট আপত্তি দিয়ে থাকলে ইসির আইন অনুযায়ী জবাব দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আর্থিক ও নির্বাচনসংক্রান্ত গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন দেশের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁদের অভিযোগের মধ্যে বিশেষ বক্তা হিসেবে টাকা নেওয়ার মতো আর্থিক অনিয়মের বিষয়টিও ছিল।
ইসি সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণে ‘কোর্স উপদেষ্টা’ ছিলেন তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। অডিট আপত্তিতে বলা হয়, অনুমোদিত পদের বাইরে ওই পদ সৃষ্টি করে ভাতা পরিশোধ করায় ১৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
আরেকটি আপত্তিতে বলা হয়েছে, তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান এবং নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তৎকালীন মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক ‘বিশেষ বক্তার’ ভাতা হিসেবে নিয়েছেন ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অনুমোদিত পদের বাইরে বিশেষ বক্তার ভাতা পরিশোধ করায় সরকারের ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আরেকটি আপত্তিতে বলা হয়, কোর্স পরিচালক পদে অতিরিক্ত সম্মানী নেওয়ায় ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এসব আপত্তির বিষয়ে ইসির নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বলেছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনের ৭ ধারায় কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্ধারিত খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা আবশ্যক নয়। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ।
ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, অডিট বিভাগ জবাব চেয়েছে। জবাব দিতে না পারলে টাকা ফেরত দিতে বলেছে। থানা, উপজেলা, জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আপত্তির বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়েছে। অনেকে ইতিমধ্যে জবাব পাঠিয়েছেন। সেগুলো তৈরি করে কমিশন অনুমোদন করেছে, শিগগির অডিট অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।
অনুমোদিত পদের বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য সম্মানী নেওয়ার বিষয়ে সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আইনিভাবে কোনো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও যা খুশি করা যায় না। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নিজেরা বেতন-ভাতা দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন।