তিন বছর পর ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩১ এএম, ১৬ মার্চ,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:২১ এএম, ৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
তিন বছর পর ১৪ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠকে যোগ দেননি জাসদ। এদিকে আজ বৈঠকে যাননি ১৪ দলীয় জোটভুক্ত বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া)। তারা বলছেন, ১৪ দল এখন ‘ডেড ইস্যু’। এই জোটের সঙ্গে ‘কন্টিনিউ’ করার কোনো মানে নেই।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের কিছু দিন আগে জোট নেতাদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করেন। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৪ দল শরিকদের কারও ঠাঁই হয়নি। এর আগের দুই মেয়াদের সরকারে থাকা মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।
বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক আহবান করেছেন। কিন্তু আমরা সেখানে যাচ্ছি না। এটা ফাইনাল সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘১৪ দলে জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ কী? এখানে জোটের কাজ কী? জোটের তো কোনো কাজ আর দেখি না। সরকার ও তাদের মন্ত্রীরা যা খুশি তাই করছেন। জোট থেকে শুধু আওয়ামী লীগের দিবসগুলো পালন করা হয়। আগে সব বিষয়ে জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হতো। এখন দেশ কীভাবে পরিচালনা হবে সে বিষয়ে জোটের সঙ্গে আলোচনা হয় না। কাজেই জোটের আর কোনো কাজ নেই। তাই জোটের বৈঠকে যাওয়ার প্রয়োজনও নেই।’
তাহলে কি আপনারা আর ১৪ দলীয় জোটে থাকছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৪ দল এখন ‘ডেড ইস্যু’। এই জোটের সঙ্গে ‘কন্টিনিউ’ করার কোনো মানে নেই। তবে জোটের অন্য সব শরিক দলের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি দল থেকে শীর্ষ দুইজন করে নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রায় তিন বছর পর ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনাসামনি পেয়ে নিজেদের ক্ষোভ-অভিমান-অভিযোগ ও করণীয় তুলে ধরলেন ক্ষমতাসীন শরিক নেতারা। জোট নেতাদের স্বভাবসুলভ আশ্বাস-আস্থায় বিগত দিনের ঐক্যবদ্ধ পথচলায় আগামী দিনেও আদর্শিক লড়াইয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নিরাশ করেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোটনেত্রী শেখ হাসিনা।
জোটের একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনও কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট যুগপৎভাবে করবে এমনটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। সামনে যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৪ দলীয় জোটের কর্মপন্থা ঠিক করা, জোটকে আরও সক্রিয় করার বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রদায়িকতা, হেফাজতের তা-ব, সমসাময়িক দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন ইস্যু।
শরিক জোটের এক নেতা বলেন, ‘আমরা বলেছি ১৪ দলীয় যে জোট সেটি আদর্শিক জোট। দীর্ঘদিন এই জোট সক্রিয় নেই। জোট থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। কিছু দিন আগে হেফাজত যে তা-ব চালিয়েছে সেটি প্রতিহত করতে ১৪ দলীয় জোট কোনো ভূমিকা রাখেনি।’
বৈঠকে আরেক নেতা বলেন, ‘আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করলাম। এরপর বিজয়ী হয়ে আমাদের বিরোধী বানিয়ে দিলেন। দূরে ঠেলে দিলেন। আবার বিরোধী হয়েও ৭২ অনুচ্ছেদের কারণে সঠিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গত নির্বাচনের পর এক প্রেক্ষাপটে আপনাদের বিরোধীদল হিসেবে শক্তিশালী হতে বলেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ১৪ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শিরিন আকতার, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়–য়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় নেতারা।