শেষ হয়ে আসছে ভর্তুকির অর্থ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১২ এএম, ১০ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২৬ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বাজেটে রক্ষিত ভর্তুকির অর্থ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে ভর্তুকির ৭১ ভাগ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এরপরও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভর্তুকির বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে ধরনা দিয়ে চলেছে। ভর্তুকির অর্থ চাওয়ার দিক থেকে শীর্ষ দুই মন্ত্রণালয় হচ্ছে- কৃষি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তারা ইতোমধ্যে ৬০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রণোদনা চেয়ে পত্র পাঠিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, বিদ্যুৎ, রফতানি ও রেমিট্যান্স খাতে ২৮ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা, যা কিনা মোট বরাদ্দের ৭১ শতাংশ। সাত মাসে ভর্তুকি প্রাপ্তিতে শীর্ষে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাত মাসে ভর্তুকির অর্থ ছাড় করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। অন্য দিকে বিদ্যুৎ খাত তাদের ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির বিপরীতে পেয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে রফতানি খাতে ছয় হাজার ৮২৫ কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে সাত মাসে ব্যয় করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্স খাতে খরচ করা হয়েছে ৩২ শ কোটি টাকা। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রেমিট্যান্স প্রণোদনার হার দুই ভাগ থেকে বাড়িয়ে আড়াই ভাগ করা হয়েছে। ফলে এ খাতে প্রণোদনার পরিমাণ সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে।
তিনি বলেন, কৃষি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বর্ধিত ভর্তুকি চেয়ে আমাদের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। চলতি বছর বাজেটে রক্ষিত প্রণোদনা লক্ষ্যমাত্রা আমাদের ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কারণ বছর শেষে কৃষি ও জ্বালানি খাতে আরো ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ২৮ হাজার কোটি টাকা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয় ৩২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে। এর আগে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী গেল ফেব্রুয়ারি মাসে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে; কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে সারের দাম বাড়ায়নি সরকার। সারের দাম যদি না বাড়ানো হয় তবে এ বছর ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার আন্তর্জাতিক বাজারে ৩২ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৬ টাকা হয়েছে; কিন্তু সরকার এই সার আগের দামেই প্রতি কেজি ১৬ টাকা দরে বিক্রি করছে। প্রতি বছর ভর্তুকির সার্বিক চিত্রে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।