বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার তাগিদ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩১ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৬ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ‘মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ তাগিদ দেন তিনি।
গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে ৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা আমাদের ভাষা বা গবেষণা কোনো ব্যাপারই তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন গঠন করে তখন প্রবাসী বাঙালি সালাম এবং রফিক অন্য কতগুলো ভাষাভাষীদের কে নিয়ে ভালোবাসি মাতৃভাষাকে নামে সংগঠন করেছিল। তার মাধ্যমে জাতিসংঘে প্রস্তাব পেশ করেছিল একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান করলে হবেনা একটা সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রস্তাব আসতে হবে। তখন আমরা উদ্যোগ নেই প্রস্তাব পেশ করি এবং ইউনেস্কো সাধারন পরিষদে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সেটা পাস হয়। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের শহীদ দিবস না সমগ্র বিশ্বের মাতৃভাষা-ভাষীদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিবস। যার জন্য পৃথিবীর অনেক দেশ এ দিবসটি পালন করে এটা বাঙালি জাতি হিসেবে অত্যন্ত গর্বের কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলা ভাষায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছেন আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কারণ আমি দেখেছি অধ্যাপক ড. লাফিফা জামান অত্যন্ত চমৎকারভাবে তিনি আমাদের বিজ্ঞানের যে প্রয়োজন আছে, গবেষণার প্রয়োজন আছে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি সেটি এত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন, আমি সত্যি খুবই আনন্দিত।
সরকার প্রধান বলেন, দ্বিতীয় দফায় সরকারে এসে আমরা একটু সুযোগ পেলাম। এখন আমরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করেছি, আমরা কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিচ্ছি আমাদের ছেলেমেয়েরা জাতীয় শিক্ষা পায় তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এমনকি শিক্ষকদেরকে কনটেন্ট তৈরি করার জন্য আমরা প্রশিক্ষণও দিয়েছি এবং তারা নিজেরাই তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ যেসব জ্ঞান সেটা মানুষের কাজে যেন ব্যবহার হয় এটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান শিক্ষায় আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছিলাম যে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান পড়ার কোন আগ্রহই ছিল না। তখন আমরা ১২ টা বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা নেই আর এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম দেওয়া হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আমার উদ্দেশ্য ছিল যে এই নামটা দিলে আমাদের ছেলেমেয়েরা তাহলে বিজ্ঞান পড়ার দিকে আগ্রহী হবে প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে আগ্রহী হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা একান্ত দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় বহুল প্রচলিত ও পরিচিত শব্দের ব্যবহারে উদার হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজ্ঞান গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান যেন মানুষের কাজে ব্যবহার হয়, এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিক শব্দগুলো দুর্বোধ্য না করে ফেলা ভালো। বহুল পরিচিত ও প্রচলিত শব্দগুলো আমাদের ভাষায় ব্যবহার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কনটেন্ট-এর বাংলা আধেয়। সবাই কনটেন্টই বেশি ব্যবহার করে এবং চেনে। আধেয় জানে না। আমি মনে করি, যে শব্দগুলো বহুল প্রচলিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, সেগুলো যে ভাষায় আসুক, সে ভাষায় আমাদের ব্যবহার করা উচিত। ওটারও পরিভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো কিছুই বুঝবো না, এটা যেন না হয়। রক্ষণশীল না হয়ে প্রচলিত শব্দগুলো দিয়েই বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করতেও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ ছিল না। এজন্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। যাতে ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান পড়ায় মনোযোগী ও আকৃষ্ট হয়।
এসময় তার সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট করেছি। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণ ও মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। সবাই এখন মোবাইলে এসএমএসসহ নানা সেবায় বাংলা লিখতে পারে। নৃগোষ্ঠীদের ভাষা ও বর্ণমালাকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষার জন্য ২০১৭ সাল থেকে তাদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করেছি। এ বছর তাদের প্রায় ৩৩ হাজার বই দিয়েছি। ২০২১ সালে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক প্রবর্তন করেছি। প্রতি দু-বছর পর পর এ পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাষা গবেষকদের ফোলোলিশ ও বৃত্তি দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।