নির্বাচন কমিশন যাদের নিয়েই হোক, দলীয় সরকার রেখে কি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব : বিবিসি বাংলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪১ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৪২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বাংলাদেশের বর্তমান বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন যখন তার মেয়াদ শেষ করছে, তখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা আদৌ সম্ভব কিনা। এই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে একটি নতুন আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ। বিরোধীদল বিএনপিসহ কয়েকটি দল বলছে, নির্বাচন কমিশন যেভাবে বা যাদের দিয়েই গঠন করা হোক, সরকার যদি দলনিরপেক্ষ না হয়, তাতে কোনো লাভ হবে না।
বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন সম্প্রতি সংসদে পাস করা হয়। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আইনের দাবি করে আসলেও এতদিন তার পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান দৃশ্যমান ছিল না। অনেকটা আকস্মিকভাবেই আইনটি প্রণয়ন করা হলে সরকারের অবস্থান এবং এমনকি ঐ আইন নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে আস্থার সংকট : বিএনপিসহ বেশ কিছু দল যুক্তি দিচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। নির্বাচন কমিশন যাই হোক না কেন- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন দল নিরপেক্ষ সরকার।
সুশাসনের বিষয়ে কাজ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা। তিনি বলেন, বড় দলগুলোর কারণে নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে আস্থার যে সংকট হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন একা কিছু করতে পারবে না। এই পরিস্থিতির দায় একক কোনো দল নয়, সব দলের ওপরই বর্তায় বলে তিনি মনে করেন।
এটা কিন্তু একটা রাজনৈতিক দল নয়। প্রত্যেকটা দলই তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রত্যেকটা ইনস্টিটিউশনের রাজনীতিকীকরণ করেছে।
এটার যে কী প্রভাব ফেলছে মানুষের ওপর-তাদের এখন কোন কিছুর ওপর বিশ্বাস নাই, বলেন অধ্যাপক শাহনাজ হুদা। এই পরিস্থিতির প্রভাব সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনতো একা কিছু করতে পারবে না। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অনেকে জড়িত। কিন্তু তাদের সকলের মধ্যে বিশ্বাস নাই।
বাংলাদেশে ক্ষমতা যেভাবে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়, সেটিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বাধা হিসাবে দেখেন অধ্যাপক শাহনাজ হুদা। আমাদের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নাই : তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাটা এমনভাবে তারা প্রয়োগ করে যে, ক্ষমতায় না থাকলে তাদের ওপর বিপদ আসতে পারে। এই একটা ধারণা থাকার ফলে তারা ক্ষমতা ছাড়তে রাজি থাকে না। মানে একটা সুষ্ঠুভাবে সরকার পরিবর্তনতো হয় না আমাদের দেশে, বলেন অধ্যাপক শাহনাজ হুদা।
সংকট হয় ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়েও : বাংলাদেশে একবারই সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল বলা যায়। আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল ২০০১ সালে। সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু জোট সরকারের মেয়াদের শেষদিকে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা, সেটিতে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করার দৃশ্যমান চেষ্টায় লিপ্ত হয় তারা। তাদের সরকারের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তখন উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল।
বামপন্থী একটি দল কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর ওপর ভর করে কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে। এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের সুবিধাভোগী অংশই সুষ্ঠু নির্বাচনে বড় বাধা বলে তিনি মনে করেন।
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সরকার অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে আমলাতন্ত্রকে তার নিজের পক্ষে নিতে সক্ষম হয়েছে।
জনসমর্থনহীন অবস্থায়ও রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে শক্তির ভিত্তি এবং একমাত্র অবলম্বন হিসাবে নিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। এটা সিস্টেমে দাঁড়িয়ে গেছে, বলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এমন ব্যবস্থার মধ্যে চলে যাওয়ার কারণে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এখনকার এই পরিস্থিতির জন্য বিএনপিকেও দায়ী করেন। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শেষ সময়ে যে চেষ্টা করেছিল, সেটা তখন ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সেই একই চেষ্টা করে এখনও পর্যন্ত সফল হয়েছে।
মি: সেলিম মনে করেন, দুই দলই ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় সরকারের প্রভাবের ভেতরে নির্বাচন করে নানা কারচুপির মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে আনতে চায়। সেটাই বড় সমস্যা। সরকার বিরোধী ইসলামপন্থী দলগুলোও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে অনাস্থা প্রকাশ করছে। এই দলগুলোও মনে করে, নির্বাচন কমিশন নয়, কোন সরকার নির্বাচন পরিচালনা করছে- সেটাই মূল বিষয় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রধান সৈয়দ রেজাউল করিম বলেছেন, দলীয় সরকার ক্ষমতায় গেলে নামতে চায় না, সেজন্য তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দেয় না। বাংলাদেশের ইতিহাসে দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কখনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নাই এবং হওয়া সম্ভবও না। এটাই বাস্তবতা।
ঐ যে তারা ক্ষমতায় উঠলে আর নামতে চায় না। সেজন্য তারা অনৈতিক এবং অবৈধ বিভিন্ন পথ বেছে নেয়। এজন্যই মূলত সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, বলেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ রেজাউল করিম।
আইনে অনেক ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের : সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া আছে সংশ্লিষ্ট আইনে।
নির্বাচনের সময় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর ওপর নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ থাকার বিধান রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোরও সর্বাত্মক সহোযোগিতা করার কথা বলা আছে। কিন্তু দলীয় সরকারের সময়ে কমিশনের ক্ষমতা কাগজে কলমেই রয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত নির্বাচন কমিশনে কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকারের সময় গঠিত হয় দুর্বল নির্বাচন কমিশন। সে কারণে নির্বাচন কমিশনও ভূমিকা রাখতে পারে না বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনরা যে সবকিছুর ওপর এককভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে থাকে- সেটিকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন। আমাদের মতো দেশে যেখানে সরকার অত্যন্ত শক্তভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সেই জায়গায় যাদের দিয়ে নির্বাচন করানো হয়, তারা কিন্তু সরকারি আমলা।
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, আইনে যাই থাকুক না কেন- নির্বাচন কমিশন দুর্বল চিত্তের হলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এবং দলীয় সরকারের অধীনে সে রকম ডাইনামিক নির্বাচন কমিশন পাওয়াও যায় না। এ পর্যন্ত আমাদের ইতিহাস তাই বলে। এ পর্যন্ত ১২টি নির্বাচন কমিশন হয়েছে।
আপনি যদি দেখেন, এরমধ্যে চারটি নির্বাচন কমিশন মোটামুটি ভাল নির্বাচন দিয়ে গেছে। এই কমিশনগুলো নিয়োগ করেছিল নিরপেক্ষ সরকার, বলেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মি: হোসেন।
তিনি উল্লেখ করেন, এখন সেই তুলনায় দেখা হলে দলীয় সরকারের সময়ে সেরকম শক্ত লোককে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করা হয়নি। প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯১ সালে : সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের পতনের পর প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯১ সালে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে র্দীর্ঘ দিনের বিতর্ক এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের আন্দোলনের মুখে সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হলে পর পর তিনটি নির্বাচন হয়েছিল সেই ব্যবস্থায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও নির্বাচন কমিশনে সেই সরকারের প্রভাব পড়ে-এমন অভিযোগও রয়েছে। সর্বশেষ সেনাসমর্থিত তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনীতিতে সংস্কারের কথা বলে বড় দুই দলেই বিভক্তি আনা হয়েছিল। সেই সরকারের গঠিত নির্বাচন কমিশনও তাতে ভূমিকা রেখেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঐ কমিশনের কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাদের সেই ভূমিকা ভুল ছিল। কিন্তু পরে তারা একটি ভাল নির্বাচন করেছিলেন। ঐ সময় কোনো সাধারণ তত্ত্ববধায়ক সরকার ছিল না। তারা একটা এজেন্ডা নিয়ে এসেছিল। যে এজেন্ডা তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
মি: হোসেন আরও বলেন, সেই এজেন্ডা হচ্ছে, তখন চারদিক থেকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছিল। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোও বলেছিল সংস্কারের কথা। এটা করতে গিয়ে তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে চলে গিয়েছিল। সেখানে নির্বাচন কমিশন আমরাও অবশ্যই ভুল করেছি। যেটা আমাদের কাজ ছিল না, বলেন মি: হোসেন।
তিনি উল্লেখ করেন, কিন্তু আমরাও চাচ্ছিলাম যে, পুরো সিস্টেমটা যদি পরিবর্তন করা যায়। সেখানে মিসটেক হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, আমরা সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করতে পারিনি, বলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন।
অনেক ব্যর্থতার অভিযোগ বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে : বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের বিতর্কিত নির্বাচন করেছে এই কমিশন। তাদের পাঁচ বছরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে যত নির্বাচন হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে।
তাদের শেষের দিকে এসে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অতটা প্রশ্ন ওঠেনি। অবশ্য নারায়ণগঞ্জের ঐ নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নেয়নি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে নিয়ে তাদের দলের বিরোধিতার ক্ষেত্রে এখন ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের অভিজ্ঞতা যুক্তি হিসাবে আসছে। আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ২০১৪ সারে ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচনই হয়নি। এবং ২০১৮ সালে আগের রাতেই নির্বাচন হয়ে গেলো, সেখানে কারও কিছুই করা সম্ভব হয়নি।
মি: আলমগীর বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও দেখছেন যে, কত প্রাণহানি হচ্ছে। এবং সরকার এব্যাপারে কিছুই করছে না। বরং এই সিস্টেম কীভাবে নষ্ট হবে-তারা সেই চেষ্টাই করছে। অবশ্য তিনি পরিস্থিতির জন্য দুষলেন দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিটাই হচ্ছে ক্ষমতায় থাকলে সে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করে এবং করে থাকে, বলেন মি: আলমগীর।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এরপর বিএনপির নেতৃত্বীধীন জোটের বর্জনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অবশ্য বিএনপি অংশ নিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ চায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন : দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের অবস্থানে আওয়ামী লীগ এবং তার শরিকরা রয়েছে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব বলে তারা বিশ্বাস করেন।
বিএনপির অভিযোগের জবাবে ড: রাজ্জাকের বক্তব্য হচ্ছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা (বিএনপি) অংশ নেয়নি। ঐ নির্বাচন ভন্ডুল করার জন্য তারা তখন ব্যাপক সহিংসতা করেছে। তখন (২০১৪ সালে) সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন করা হয়েছে।
এরপর ২০১৮ সালে মানুষের অস্বাভাবিক সমর্থন আমাদের দলের প্রতি ছিল। তবে জনসমর্থন বেশি থাকলে অনেক ক্ষেত্রে অতিউৎসাহী নেতাকর্মী কিছু অনিয়ম করে, বলেন ড: রাজ্জাক। তবে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলে সুষ্ঠু নির্বাচনে দলীয় সরকার কোনো বাধা নয়-এই বক্তব্য বা অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ড: রাজ্জাক নির্বাচনে কমিশনে দৃঢ় মনোভাবের ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সংবিধানেই বলা আছে, নির্বাচনের সময় বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবারই দায়িত্ব কমিশনের। সেখানে নির্বাচন কমিশনের যারা দায়িত্ব পাবেন, তাদের দৃঢ়তা, মনোবল, নৈতিকতা এবং মানসিক শক্তি থাকা দরকার, বলেন ড: রাজ্জাক। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে বড় ইস্যু হিসেবে দেখেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারী সংস্থা ফেমার প্রধান মুনিরা খান মনে করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকার কারণেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। পৃথিবীর বহু দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় এবং তা সুষ্ঠু হয়।
মুনিরা খান বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনের যে নিয়ম আছে, সেখানে তারা ইচ্ছা করলে স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। কেন তারা ইচ্ছা করে না- সেই প্রশ্ন আছে। আর দলীয় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব-এখানে বড় বিষয় বলে তিনি মনে করেন।
নির্বাচন পরিচালনায় দলীয় সরকারের ভূমিকা এবং নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে দলগুলোর মধ্যেই যে চরম অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে-তা সহসাই কাটবে কি না, তা এখনই বলা মুশকিল। এছাড়া দলীয় সরকার শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা কতটা দেখাবে- সে প্রশ্ন থেকেই যায়।