রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো পদক্ষেপ কাজে আসেনি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫২ এএম, ৭ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০৭ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা কোনো কাজে আসেনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ বুধবার (সচিবালয়ে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির প্রথম সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর এ সম্পর্কিত জাতীয় কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সাত সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সভায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, তারা কী অবস্থায় আছে, কীভাবে যাবে তারা এ দেশ থেকে সবকিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল আলোচনার বিষয়টি ছিল যে, আমাদের মূল কাজ হলো- যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়া। প্রত্যাবসানের জন্য যা যা করণীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আমরা তা করে যাচ্ছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যে চীন, জাপান ও জার্মানির সঙ্গে মিটিং করেছেন। তিনি আশাবাদী যাদের আইডেন্টিফাই করা হয়েছে, তাদের সরকার যাদের আইডেন্টিফাই করেছেন, তাদের হয়তো যাওয়া শুরু হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সভায় এটা জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি টিম মিয়ানমার গিয়েছিল, যেখানে স্টেট কাউন্সিলর ও কয়েকজন জেনারেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। সেখানে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যৌথ কমিটি, বর্ডার কন্ট্রোল কমিটি হয়েছিল কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেটা ফলো করে যত তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিগত দিনে অনেকবার (মিয়ানমার) গিয়েছেন, অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু কোনোটাই কাজ হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও আমাদের কনফার্ম করেছেন, তিনি বাইলেটারাল, ট্রাইলেটারাল, মাল্টিলেটারাল সবভাবে তিনি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী তারা (মিয়ানমার) খুব শিগগিরই রোহিঙ্গা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। মিয়ানমারকে কতজন রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হয়েছে এবং কতগুলোকে তারা চিহ্নিত করেছে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উই লেফট নো স্টোন আনটার্ন, আমরা সব স্টোন টার্ন করছি, আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। যেখানে প্রয়োজন আমরা যাচ্ছি। আমি গিয়েছি, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছেন, আমাদের বর্ডার গার্ড লেভেলে আলোচনা চলছে। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসেছেন, সবই হচ্ছে তারপরও রেজাল্ট হচ্ছে না, আমি এটাই বলছি। তারা (মিয়ানমার) অনেক কিছু কমিটমেন্ট করেছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, তারা যেগুলো বলছে, সেগুলো করার জন্য আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবসময় কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তিনটি দেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, সেটাও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা একটা সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলাম যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চতুর্দিকে আমরা কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করবো, যাতে মিয়ানমারের নাগরিকরা যারা এখানে অবস্থান করছেন তারা যাতে যত্রতত্র না যেতে পারেন, যাতে এক জায়গায় থাকতে পারে। তারাও যাতে অন্যরকম সিচুয়েশনে না পড়ে। এজন্য আমরা কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। শুধু কাঁটাতারের বেড়া নয়, চতুর্দিকে একটা ওয়াকওয়ে থাকবে, টাওয়ার থাকবে, সিসি ক্যামেরাও থাকবে। তাদের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা আমাদের সেনাবাহিনী সম্পন্ন করবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তায় নবগঠিত দুটি ইউনিট কাজ শুরু করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনে বিজিবি ও র্যাবের সহযোগিতা নেবে। ক্যাম্পের বাইরে এখনকার মতো সেনাবাহিনীর অবস্থানও থাকবে। ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা মাঝে মাঝেই মিয়ানমার গিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, লাভ-লোকসানের ভাগ নিয়ে প্রায়শই কলহ হয়। আমরা শুনেছি কলহের জের ধরে খুনাখুনি হচ্ছে, দু-চারটি খুনও হয়েছে। নতুন বাহিনীও তৈরি হয়েছে। এটা যাতে না বাড়ে সেজন্য টহল অব্যাহত থাকবে, রাতের টহল জোরদারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গারা নিজেরাই গিয়েছেন, কাউকে জোর করে নেয়া হয়নি। সেখানে এক লাখ যেতে পারবেন। যারা যেতে চাইবেন তারা যেতে পারবেন। উৎসুখ জনতা নোয়াখালী থেকে ভাসানচরে যাতায়াত শুরু করেছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, উৎসুক জনতা যেন ভাসানচরে যাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকে। কেউ যাতে প্রয়োজন ছাড়া ভাসানচরে না যায়, সেখানে গিয়ে যাতে নতুন সমস্যা তৈরি না করে। এই সিদ্ধান্ত সভায় হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, কক্সবাজারে ১৮০টি এনজিও কাজ করছে। ভাসানচরে ইতিমধ্যে ২২টি এনজিও কাজ শুরু করেছে। নিবন্ধন না থাকায় এনজিও ব্যুরো কয়েকটি এনজিওকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা ওখানে কাজ করতে পারবেন না। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের যেসব এলাকায় বন ধ্বংস হয়েছে, সেখানে বনায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।