শেখ হাসিনার সরকার কোনো অবস্থাতেই কর্তৃত্ববাদী নয় : পরিকল্পনামন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৭ এএম, ৯ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৪ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কোনো অবস্থাতেই ‘কর্তৃত্ববাদী’ নয় বলে দাবি করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। দেশ-বিদেশে থাকা সমালোচকদের অনেকেই সরকারকে ‘কর্তৃত্ববাদী’ বলে নিন্দা করেন। এ নিয়ে তর্ক ‘অহেতুক’ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কর্তৃত্ববাদী হতে হলে আগে ‘কর্তা’ হতে হয়। ৫ বছর পর পর হাত জোড় করে আমরা জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যাই। যারা দেয়ার মালিক (ভোটাররা) তারা যদি না দেয় তবে কি কর্তৃত্ব থাকে? আমি অমুকের কন্যা, আমি যা বলবো তা হবে, হতে হবে- এটা শেখ হাসিনা বলতে পারেন না। কারণ তাকে দেশ চালাতে হয় সংবিধান এবং আইন-কানুন মেনে। তাছাড়া মহান সংসদে জীবন্ত ১৮ কোটি মানুষ রয়েছে। তাদের প্রতিনিধিরা যা বলবেন তাই শেখ হাসিনাকে মানতে হয়।
আমি, আপনি- সকলেই এটা মানতে বাধ্য। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেলও সংবিধান এবং আইনের বাইরে যেতে পারেন না। সুতরাং ‘কর্তৃত্ববাদ’ নিয়ে বিতর্ক অমূলক। কোথায় কর্তৃত্ববাদ?’ একটি মানবতা সংগঠনের সদস্যদের করোনাকালীন কার্যক্রমের জন্য সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া না হওয়া বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে সরকারের জ্যেষ্ঠ ওই মন্ত্রী বলেন, আমরাও (সরকার) আইনের শাসন চাই। অবশ্যই চাই, কে চায় না বলুন? আমরা সর্বত্র আইনের শাসন নিশ্চিত করতে চাই। আমরা ন্যায় বিচার চাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ মাঠে ময়দানে কি ন্যায় বিচার আছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমরা তা কি সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি? না, যার গায়ে বল আছে তিনি আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তার মুখের সামনে থেকে খাবারটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছেন। জল-জমি, খাল-বিল সবকিছু শক্তিমানের দখলে।
মন্ত্রী বলেন, খাসজমি ভূমিহীনদের মধ্যে স্থায়ী বন্দোবস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এটা কি করা সম্ভব হয়েছে? না, তা হয়নি। তিনি নিজে জেলা প্রশাসক থাকা অবস্থায়ও এটি করতে পারেননি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কেবল আইন দিয়ে তা করা সম্ভব হয়। এজন্য চাই সমাজের সর্বস্তরের ভূমিকা। আমাদেরকে জাতিগতভাবে সভ্য হতে হবে। মানুষের অধিকার বুঝিয়ে দেয়ার প্রয়াসে আমাদের সবাইকে সামিল হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ধর্মমতে শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেয়ার কথা। আন্তর্জাতিক আইনও তাই বলে। কিন্তু আমরা কি সমাজের সর্বত্র এটা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আজ না কাল বলে আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে টালবাহানা করি। জেলে বা খেটে খাওয়া মানুষকেও আমরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করি। তার ন্যায্য মূল্য দেই না। মন্ত্রী বলেন, আমার চোখের সামনে এমন অনেক ঘটনা দেখেছি, দেখছি। কিন্তু এখন সময় এসেছে এ নিয়ে সরব হওয়ার।
বর্তমান প্রজন্মকে মানুষের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেয়ার প্রশ্নে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাহলেই আমরা দুনিয়ায় সভ্য জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো। মন্ত্রী আফসোস করে বলেন, আমরা মানুষকে এখনও মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে শিখিনি। আমরা কাউকে অফিসার হিসেবে, মিলিটারি বা পুলিশ হিসেবে, কাউকে দেখি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। অবশ্য যে কোনো পেশার লোক সম্মানীয়। কিন্তু তাদের কমন পরিচয় তারা মানুষ। সেভাবেই তাদের দেখতে হবে। কারণ ‘মানুষ’ পরিচয় সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এখানে কোনো পাল্লা বা নিক্তি নেই, হিউম্যান সোসাইটি। এসব দিক থেকে ইংল্যান্ড, আমেরিকা বেশ এগিয়েছে। তারা সভ্যতার শিখরে পৌঁছে গেছে কিংবা এক দেশের চেয়ে অন্য দেশ এগিয়ে এমন তুলনা বা দাবি আমি করবো না। এটা আমার কাজ না। তবে আমি বলবো তা মানবতার প্রশ্নে, ন্যায় বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তারা সাফল্যের কাছাকাছি রয়েছে বলাই যায়। কিন্তু এটা সত্য, তাদের তুলনায় আমরা এখনো অনেক পেছনে আছি।
মন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তথা সমাজের সর্বত্র সুন্দর, সাম্য ও ন্যায় বিচার দেখার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে বলেন, এটা হলেই আমরা সভ্য জাতি হবো। আমরা সুশিক্ষিত জাতি হবো। আমাদের চিন্তার কেন্দ্রে থাকবে মানুষ। আমরা মানুষ পরিচালনার কেন্দ্রে থাকবো না। মতব্বরী বা উঁচু চেয়ার নয়, বরং মানুষের সঙ্গে থেকে তাদের নিয়েই আমরা মানবতাবাদী জাতি হিসেবে এগিয়ে যাবো।’ অনুষ্ঠানে উত্থাপিত মৌলভীবাজার জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ এবং একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দাবি দু’টি যৌক্তিক এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অবহেলিত জেলাগুলোকে প্রায়োরিটি দেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, লন্ডন, নিউ ইয়র্কসহ বহু জায়গায় আমি এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছি। আমি আশা করি নিশ্চয়ই সরকার প্রধান দাবিটি বিবেচনা করবেন। অচিরেই মৌলভীবাজাবাসীর হাতাশা দূর হবে। করোনাকালে মারা যাওয়া মানুষের দাফন-কাফন ও সৎকারে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটি (বিআইএস) মৌলভীবাজারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয় রাজধানীর কাওরানবাজারস্থ জালালাবাদ ভবনে।
শনিবারের ওই আয়োজনে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে তার উত্তম প্রমাণ হচ্ছে শেখ বোরহান উদ্দিন রহ. ইসলামী সোসাইটি। এই সংগঠন একটি ইসলামী সোসাইটি হয়েও দাফন-কাফনের পাশাপাশি সৎকার করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি বাংলাদেশের সামাজিক সংগঠনগুলোর রোলমডেল হতে পারে। এমন মানবিক সংগঠনগুলোকে রাষ্ট্র এবং সমাজের আরও বেশি পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটি ২০০১ সাল থেকে শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে, তারই ধারাবাহিকতায় এই করোনা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, যাদের লাশ ছুঁতে চাননি স্বজনরা, সেই কঠিন মুহূর্তে মুসলিমদের দাফন-কাফন এবং হিন্দুদের সৎকারে বিআইএস এর স্বেচ্ছাসেবীরা বিশেষ অবদান রাখেন।
তাদের সম্মাননা জানাতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম. মুহিবুর রহমান মুহিব সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল, এএম আমিন উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শামস্-উল ইসলাম, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন আহমদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তানভীর আহমেদ তরফদার, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং মিজানুর রহমান বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চিফ পেট্রন, মৌলভীবাজার জেলা সদরে মেডিকেল কলেজ চাই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ক্যাম্পেইন গ্রুপের এডমিন বৃটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ মকিস মনসুর। সংগঠনের মহাসচিব মিজানুর রহমান রাসেল ও জেলাব্যাপী মেধা যাচাই পরীক্ষার উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ওয়াসিম আহমেদ নিশান এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন।