খালেদা জিয়া অস্ত্র দিয়েছিলেন, খাতা-কলম দিয়েছি আমি-প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৪ এএম, ৫ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছাত্রলীগের হাতে আমি খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। কারণ খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে বলেছিল তাদের হাতে নাকি আওয়ামী লীগের বিনাস ঘটবে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করবে অর্থাৎ তারা দিয়েছে অস্ত্র। এটা জিয়াউর রহমানেরই নীতি ছিল। আমাদের বহু মেধাবীর হাতে অস্ত্র আর অর্থ তুলে দিয়ে তাদের বিপথে পরিচালিত করেছিল। কাজেই আমরা চেয়েছি শিক্ষা। কারণ শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি উন্নত হতে পারে না।
আজ সোমবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
সরকার শিক্ষাকে সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত নতুন ১৬টা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ চলমান। আবার বেসরকারি খাতে যারা বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাচ্ছে তাদেরও সুযোগ করে দিচ্ছি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ, আমরা চালু করতে পারছি না। যখনই চালু করতে যাচ্ছি আবার দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসছে সেজন্য করতে পারলাম না। তারপরেও আমার ঘর আমার বিদ্যালয় ব্যবহার করে তার মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। ছাত্রদের বলব বসে না থেকে যা পার নিজেরা কিছু পড়াশোনা কর। পাঠ্যপুস্তক তো আছেই, তাছাড়ও পড়ার অনেক সুযোগ আছে। জ্ঞান যত বেশি অর্জন করতে পার ততই নিজেকে সম্পদশালী মনে করবে, ধন সম্পদ কোনো দিন কোনো কাজে লাগে না। করোনাভাইরাস একটা জিনিসই শিক্ষা দিয়ে গেছে- যার যতই টাকা পয়সা থাকুক, যার যতই অর্থ সম্পদ বাড়ি গাড়ি থাকুক না কেন সেগুলো যে একেবারেই ব্যর্থ তার যে কোনো মূল্য থাকে না করোনাভাইরাস অন্তত এই শিক্ষাটা মানুষকে ভালভাবে দিয়েছে।
শিক্ষা বিদ্যা এটা এমন একটা শিক্ষা, এমন একটা সম্পদ এই সম্পদক কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এই সম্পদ থাকলে জীবনে কখনো হোঁচট খাবে না। চলার পথ মসৃণ করে এগিয়ে যেতে পারবে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের সেই শিক্ষাই দিয়েছি। কাজেই তোমরাও সেই শিক্ষা নেবে। ছাত্রলীগের সেটাই কাজ থাকবে। নিজেরা পড়বে অন্যকে পড়াও। আর করোনা ভাইরাসের সময় নির্দেশ দিয়েছি- নিজের গ্রামে গিয়ে কেউ নিরক্ষর থাকলে তাকে জ্ঞান দাও।
ছাত্রলীগের যে মূলমন্ত্র- শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। শিক্ষাটা হচ্ছে প্রথম। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তি আমরা চাই। এটা মাথায় রেখে ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা নেতা কর্মীকে আদর্শ নিয়ে চলতে হবে এটাই আমি চাই। প্রত্যেকে আদর্শ নিয়ে না চলতে পারলে কখনো বড় হতে পারবে না। ধন সম্পদক অনেকে বানাতে পারবে কিন্তু দেশকে কিছু দিতে পারবে না, মানুষকে কিছু দিতে পারবে না। নিজে ভোগ করতে পারবে। আবার করোনাকালে সে ভোগও সীমিত হয়ে যায়। সেটাও পারে না সেটাই বাস্তবতা। তোমরা সবাই পড়াশোনা কর।
করোনাকালে ছাত্রলীগের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা যে কাজ করে গেছ তার জন্য সব সময় সাধুবাদ জানাই। আমি জানি ক্ষেত্র বিশেষে কোথাও দুই-একটা ঘটনা ঘটে আর আমাদের দেশে কিছু পত্র-পত্রিকা আছে যতই ভাল কাজ কর সেটা লেখার তাদের যোগ্যতা নাই। যদি কোথাও এতটুক খুদ পায় সেগুলো বড় করে লিখতে পারে, এটা তাদের একটা দীনতা, ব্যর্থতা। তাদের মন মানসিকতার একটা দীনতা বলেই মনে করি, ওগুলো আমি বেশি একটা হিসাবে ধরি না।
তিনি বলেন, আমি দেখি ছাত্রলীগকে যখন যে নির্দেশ দিয়েছি বৃক্ষরোপণ করার করেছে। করোনা আক্রান্তদের সহায়তা করেছে। মানুষের সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের সেবার জন্য সেভাবে নিজেদের গড়ে তুলবে। আদর্শবান নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। আগামী দিনে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেত পারব। আমাদের আর কত? ৭৫ বছর বয়স, আর কত দিন? ছাত্রলীগের ৭৩ আমার ৭৫। আমিও ৭৫-এ পা দিয়েছি। কতদিন আর চলব। তোমাদের কিন্তু সামনে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেভাবেই তোমরা নিজেদের গড়ে তুলবে, কিন্তু মনে রাখবে, যে আদর্শ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে সেই সফল হবে, আর যদি অর্থ সম্পদের দিকে নজর চলে যায় কখনো সফল হতে পারবে না। ভোগবিলাস করতে পারবে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তোল দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হও এবং ছাত্রলীগ বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে সেই ঐতিহ্যের কথা মনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লেখ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন।