মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশের জনগণ পছন্দ করেনি - পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৮ পিএম, ২৮ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪
র্যাবের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জনগণ পছন্দ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের কাছে তুলে ধরেছি। তিনি এ নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে আলোচনায় রাজি হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের চলমান ঢাকা সফরের আপডেট জানাতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রাসঙ্গিকভাবে আসে বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী মোমেনের ফোনালাপের বিষয়টি। একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ফোনের বেশিরভাগ অংশজুড়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহারের দাবি বাংলাদেশ জানিয়েছে কি না? জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, ফোনালাপে আমিও প্রত্যাহারের কথা বলিনি। উনিও তুলেননি।
এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ব্লিঙ্কেন মুঠোফোনে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় ৩০ মিনিটের আলোচনায় আগামী বছর সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাঁরা কথা বলেন। এ সময় র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি তোলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ফোনে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। মূলত বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে সরাসরি মোবাইল ফোনে কল দিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেন। বুধবার সন্ধ্যার সেই ফোনালাপে সন্ধ্যার ওই আলাপে মন্ত্রী মোমেন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। কোন রকম আলোচনা ছাড়া ওই নিষেধাজ্ঞা জারিতে বাংলাদেশ বিস্মিত হয়েছে জানালে ব্লিঙ্কেন ভবিষ্যতে এ নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত করেন। তার আশ্বাসে মন্ত্রী মোমেন খুশি হয়েছেন জানিয়ে মানবজমিনকে গতকাল রাতে বলেন, তিনি আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়েছেন। আমি বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সলিড রিলেশনশিপ, এতে কোন খাদ নেই। এই অবস্থায় কোন রকম আলোচনা ছাড়া এমন নিষেধাজ্ঞা আমাদের হতবাক করেছে। যে র্যাবের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা তারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদক এবং চোরাচালানের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্লিখিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাবের প্রশংসা করার কথা, কারণ স্টেট ডিপার্টমেন্ট দুনিয়াজুড়ে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বাহিনীগুলোকে উৎসাহ দেয়। তাছাড়া র্যাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অভিন্ন। আমরা উভয়ে এসব মূল্যবোধ লালন করি। সুতরাং এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন রকম কমিউনিকেশন গ্যাপ হওয়া উচিত নয়। যদিও ওই গ্যাপের কারণেই নিষেধাজ্ঞাটি এসেছে বলে মন্তব্য করেন মোমেন। আজকের সংবাদ সম্মেলনেও মন্ত্রী অভিন্ন ভাষায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। উল্লেখ্য, র্যাব এবং সংস্থার সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জারির পর এই প্রথম দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মধ্যে আলাপ হলো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সন্ধ্যায় মন্ত্রীকে মোবাইলে ফোন করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। মন্ত্রী মোমেন তখন বঙ্গভবনে ছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গভবনে থাকাকালেই ফোনটি ধরেন।
ফোনালাপে গত পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের চলমান সুসম্পর্ক বজায় রেখে ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করেন। গত ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও রয়েছেন, যিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং র্যাব ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে।