আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৪ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৩ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৫০তম বছর অর্থাৎ বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তি আজ। আমাদের প্রিয় এই দেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম গৌরব অর্জন ও অহঙ্কারের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে এ জাতির বীরত্বের আত্মপ্রকাশের দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালের এদিনে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় নতুন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। তাই আজ আমাদের বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে আজ লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। মহান বিজয়ের ৫০তম বছর নানা কর্মসূচিতে পালিত হবে। নানা রঙে সাজানো হবে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত। এ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। কৃতজ্ঞ জাতি আজ দিনভর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে একাত্তর সালে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। নতচিত্তে স্মরণ করবে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া শহীদদের। আজ ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির নেতৃবৃন্দ। করোনা মহামারির কারণে এবার সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণকালে নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ উপস্থিত থাকতে পারবেন না। গতকাল বুধবার সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘মহান বিজয় দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। কোভিড-১৯ এর কারণে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
তাদের মধ্যে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক উপস্থিত থাকবেন। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রামনাথ কোবিন্দ তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। আজ ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের রাষ্ট্রপতি গেস্ট অব অনার হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। একই দিন বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের সাউথ প্লাজায় বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং রক্তস্নাত বিজয়ের আবেগ ও আনন্দ উদযাপনের জন্য আয়োজিত মহাবিজয়ের মহানায়ক অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করবেন।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শুরু হয় চূড়ান্ত স্বাধীনতার যুদ্ধ। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী করে। অথচ সাধারণ জনগণের ভোটের মূল্য দেয়নি পাকিস্তানি শাসক। ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানা শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। মিছিল মিটিং সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। এরই মধ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অসহায় নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের কাছে বন্দি হন। ঐ অবস্থায় জাতি যখন দিশেহারা ঠিক এমনি এক অমানিশার ঘোর অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলসে উঠলো প্রকৃতি ও মানুষ। বাতাসের প্রতিটি তরঙ্গে কান পেতে সবাই শুনলো-‘উই রিভোল্ট’। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। গণতন্ত্র রক্ষায় সাধারণ জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষায় শুরু হওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের আজ বিজয়ের ৫০তম বর্ষে এসে ভূলুন্ঠিত জনগণের ভোটের অধিকার। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কূটকৌশলে হরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় অর্জন করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি। কেন্দ্রে সরকার গঠন নিয়ে নতুন করে শুরু হয় ষড়যন্ত্রের পালা। নির্বাচনের পর পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে টালবাহানা শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। এমনকি ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও মুলতবি করা হয়। পাকিস্তানের সামরিক ও ভুট্টো চক্রের ষড়যন্ত্র এবং হঠকারিতার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মাঝে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা দ্রুত প্রবলতর হয়ে উঠতে থাকে। এজন্য মূলত দায়ী পাকিস্তানের সামরিক চক্র ও ভুট্টো। কারণ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে অবশেষে তারা সামরিক সমাধানের পথকেই বেছে নেয়।
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করতে চায়। সোনার বাংলাকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে হানাদার বাহিনী এদেশের জনগণের কাছ থেকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে তারা ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, আরমানিটোলা ও পিলখানায় নির্মম গণহত্যা চালায়। অসহায় নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়। ঘরে ঘরে ধর্ষণ ও লুটপাট চলে। বিপন্ন মানুষের আর্তচিৎকারে সেদিন আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলেও হানাদার বাহিনীর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। মুহুর্মুহু গোলাবারুদের বিস্ফোরণে রাজধানী ঢাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগের পূর্বে তিনি সেনাবাহিনীকে গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে যান। ঢাকা ত্যাগের আগে দিনের বেলায় রংপুর ও সৈয়দপুরে বেশ ক’টি জায়গায় স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বিলম্ব হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং হত্যাকান্ডকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন।
বিবৃতিতে শেখ মুজিব বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি এবং রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ সদিচ্ছা দেখিয়েছি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও তার উপদেষ্টারা বিষয়টির রাজনৈতিক সমাধান চাইলে তাদের সেদিকেই যেতে হবে। তিনি দেশের বিভিন্নস্থানে নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২৭ মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেখ মুজিবকে করাচিতে নিয়ে যায়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালায়। পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম এই গণহত্যা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত। এ সময় চির আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতার লাল সূর্যটি যখন নির্যাতন ও দুঃশাসনের কালো মেঘের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছিল ঠিক সেই সময় জাতির ভাগ্য অনিশ্চয়তায় মধ্যে ঠেলে দিয়ে প্রলয় আতঙ্কে আতংকিত হয়ে এ জাতির তথাকথিত রাজনীতিবিদ সিংহ শাবকরা অনেকেই আত্মগোপন করেছিলেন। তাদের কেউ যান বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে গংয়ের বাড়িতে, কেউ যান ওপারে। মুহূর্তের মধ্যেই নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে জনগণ। নিজের বাঁচার পথ নিজেকেই বেছে নিতে হয়। নেতৃত্বহীন মানুষ সামনে এগিয়ে চলে। অসীম সাহস, সুগভীর দেশপ্রেমের প্রচন্ড বাতাসে কালো মেঘ সরিয়ে জন্ম-জন্মান্তরের প্রত্যাশিত স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে (আজকের স্বাধীনতার সোল এজেন্ট বলে দাবিদার গোষ্ঠী) ব্যর্থ হলে জাতি পুনরায় অনাদিকালের জন্য পরাধীনতার নাগপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়ার উপক্রম হয়। এমনি এক অনিশ্চয়তা ও ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের বনিআদমেরা যখন বাকরুদ্ধ, শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, জীবন নিয়ে পালিয়ে বাঁচবে নাকি জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আশা দেয়ার, ভরসা দেয়ার, সান্ত¡Íনা দেয়ার যখন আর কেউ এগিয়ে আসছে না, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঠিক এমনি এক অমানিশার ঘোর অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলসে উঠলো প্রকৃতি ও মানুষ। বাতাসের প্রতিটি তরঙ্গে কান পেতে সবাই শুনলো-‘উই রিভোল্ট’। প্রতিরোধের মশাল জ্বলে ওঠে চট্টগ্রামের ষোলশহরের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের প্রাণপ্রিয় নেতার ডাকে। ৩৫ বছরের এক মেজর নিজ দায়িত্বে ঘোষণা করেন বিদ্রোহ। এটিই স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম বিদ্রোহ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই একটি কণ্ঠের ঘোষণায় গোটা দেশ উঠে দাঁড়ায়। মানুষ হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। স্বাধীনতার মন্ত্রে জ্বলে ওঠার সময় সেই কণ্ঠ গর্জে ওঠে। সেই কণ্ঠ স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি করার মতো মানুষের চেতনায় যুদ্ধ করার অমিত সাহস জোগায়। শত্রুর বিরুদ্ধে তৈরি করে ক্ষুব্ধ মানুষের অগ্নিবলয়। সেই সিংগা ফুঁকানো কণ্ঠের ঐতিহাসিক ঘোষণা মানুষের রক্তে বিদ্রোহের বান ডেকে দেয়। ইতিহাসের সেই যুগ বদলে দেয়ার ঘোষণার মহানায়ক জিয়াউর রহমান। সবাই বুঝতে পারল চুপসে গেলে চলবে না, ঝলসে উঠতে হবে। দিকভ্রান্ত জাতি খুঁজে পায় পথ। ফিরে পায় আত্মবিশ্বাস। মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেই সেদিন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয় এবং তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান, গঠন করেন অস্থায়ী সরকার। জলে-স্থলে-আকাশে চলতে থাকে তীব্র প্রতিরোধ। এরই মধ্যে ভারতের প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনীর জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সর্বপ্রকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্য কথায়, ততদিনে পাক হানাদার বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আটকে পড়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণের ফলে তাদের মনোবলও ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় দিল্লিস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ব্যাপারে। ১৬ ডিসেম্ব^র আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ করে ভারত আল্টিমেটাম দেয়। এবার সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। মাত্র ১৩ দিনের যুদ্ধে পাকবাহিনী নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে। অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু প্রায় ৯ মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা যখন পাকিস্তানি বাহিনীকে কোণঠাসা করে একের পর এক এলাকা মুক্ত করছিল, যখন পাক হানাদার বাহিনী গ্রাম ছেড়ে মূল শহরগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল তখন ভারত ৩ ডিসেম্ব^র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করে। মাত্র ১৩ দিন যুদ্ধ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সব কৃতিত্ব ভারত নিজের বলে দাবি করার অপচেষ্টা চালায়। অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে, সম্ভ্রমহারা দশ লাখ মা-বোন-জায়ার ক্রন্দনধোঁয়ায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোরের যে রাঙা আলোটি স্পর্শ করেছিল ভূমি, দেনদরবার নয়, কারও দয়ার দানে নয়, সাগর-সমান রক্তের দামে বাংলাদেশ ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা, রক্ত-সাগর পেরিয়ে গৌরবময় এই বিজয়ের সূচনা জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কামনা করি তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ। আজকের এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসব নির্ভীক বীর শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন মাতৃভূমি পেয়েছি। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। পরাধীনতার হাত থেকে দেশের বিজয় অর্জনে যেসব মা-বোন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন- আমি জানাই তাদের সশ্রদ্ধ সালাম। শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়েই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের জয়যাত্রা শুরু। এই দিনে নিজ পরিচয়ে আমরা বিশে^র দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে আমাদের গণতন্ত্রের পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার, মানবিক সাম্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্থাৎ বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। ১৯৭১-এ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হলেও চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত আজো বিদ্যমান। আগ্রাসী শক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে আমাদেরকে একটি পদানত জাতিতে পরিণত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। এখনও ষড়যন্ত্রকারীরা নানাবিধ নীলনকশা রচনা করে আমাদের বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে দুর্বল করে চলেছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪-তে প্রহসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচন করে জনমতকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এদেশে এখন মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নেই। এদেশের মানুষ এখন সম্পূর্ণভাবে অধিকার হারা। এদেশে বহুমাত্রিক বহুদলীয় গণতন্ত্র নিরুদ্দেশ করা হয়েছে। গণতন্ত্রহীন দেশে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার দাপটে সর্বত্র হতাশা, ভয় আর নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে এসেছে। ক্ষমতা জবরদখলকারীরা জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে রক্ত ঝরাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি যেন ভয়ংকর অন্ধকারাচ্ছন্ন। যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন সেই অবিসংবাদিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে নানা শর্তের বেড়াজালে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ, হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। অথচ সরকার তাঁর সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে প্রেরণের সর্বমহলের দাবিকে অগ্রাহ্য করে আসছে। বিজয় দিবসের চেতনা আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে নেত্রীর মুক্তি এবং বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার দাবির আন্দোলনে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকারে। বর্তমান অশুভ অগণতান্ত্রিক শক্তি তাদের নীলনক্শা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও জুলুমকেই বেছে নিয়েছে। ওদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করতে মহান বিজয় দিবসের প্রেরণায় বলীয়ান হয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মহান বিজয় দিবসে আমি দেশবাসী সকলের প্রতি সেই আহবান জানাই। বিজয় দিবস উপলক্ষে আমি সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশি সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি।
১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক মহিমামন্ডিত ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটির জন্যই সারাবিশে^ বাংলাদেশি জাতি ও বাংলাদেশের মর্যাদা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘ পরাধীনতার শৃৃঙ্খল ছিন্ন করে ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদিনে আমরা প্রিয় মাতৃভূমিকে দখলদারমুক্ত করতে সক্ষম হই। এ স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা আত্মদান করেছেন, সেসব বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে শুরু হওয়া স্বাধীনতাযুদ্ধ। ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে দেশের অকুতোভয় বীর মুক্তি যোদ্ধারা বিজয়ী হয়। তাই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের গর্বিত এবং মহিমান্বিত বিজয় দিবস। এদেশের দামাল ছেলেরা হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছিলো দেশমাতৃকার স্বাধীনতা। আজকের এ মহান দিনে সেসব বীর সেনাদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ অভিবাদন।
তিনি বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম। সে লক্ষ্য পূরণে আমরা আজও কাজ করে যাচ্ছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে আপোসহীন নেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারান্তরীণ করে রাখার পর কার্যত এখনও তাঁকে বন্দি অবস্থায রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকার কারণে দেশনেত্রী এখন ভীষণ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সরকার নানা টালবাহানায় দেশনেত্রীর সুচিকিৎসাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং তাঁকে বিদেশে পাঠানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তাঁকে নিঃশেষ করতে অন্তহীন চক্রান্তজাল বুনে চলছে। দেশনেত্রীর মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ পাঠাতে সরকারকে বাধ্য করতে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বিজয়ের এ দিনে আমি দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি।
মহান বিজয় দিবসে বিএনপির কর্মসূচি : ১। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিাবর ভোরে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ২। সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার জন্য সকাল ৭-৩০টায় দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা থেকে রওনা দিবেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দলের পক্ষ মহান শহীদদের উদ্দেশ্যে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। ৩। ঐদিনই জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরস্থ মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। মাজারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীরসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। ৪। দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ৪। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামী ১৯ ডিসেম্বর বেলা ২টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ৫। এছাড়াও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। ৬। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ ১৬ ডিসেম্বর ভোরে দেশব্যাপী বিএনপির কার্যালয়গুলোতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে স্থানীয় সুবিধাজনক সময়ে দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।