

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৪ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৮ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৩

আজ মঙ্গলবার ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে স্বাধীনতার পাদপীঠে আত্মাহুতি দেয়া বুদ্ধিজীবীদের। অগ্রহায়ণের শিশিরভেজা কাকডাকা ভোরে মানুষের ঢল নামে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে, রায়েরবাজার বধ্যভূমির গণকবরে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি পৃথক বাণী দিয়েছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদৎ বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার এক বাণীতে তিনি এ শ্রদ্ধা জানান। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বাণীতে বলা হয়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদৎ বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। অমর বুদ্ধিজীবীগণ দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান, যাঁরা একটি সমৃদ্ধ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁরা ন্যায় বিচারভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু হানাদার বাহিনীর দোসররা দেশের এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে বিশ্ব ইতিহাসে এক ঘৃণ্য অধ্যায় রচনা করে। নতুন দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল ও পঙ্গু করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই অগণতান্ত্রিক শক্তি তাদের মুখোশ খুলে ফেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ন্যায় দেশের মানুষের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো একের পর এক হরণ করতে থাকে, এক নদী রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দিনে দিনে দুর্বল করে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশা ধূলিসাৎ করে।
সেই দুঃশাসনের ঐহিত্য ধারণ করে তাদের উত্তরসূরী বর্তমান ক্ষমতাসীনরা বিভেদ অনৈক্য এবং সংকীর্ণতার দ্বারা ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়া ও জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। সুতরাং আমাদের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং দেশকে একটি সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ কারে যাবেন।
আজকের এ শোকাবহ দিনে আমি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই-আসুন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা একসাথে কাজ করি। আমি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আমি বিজয়ের চূড়ান্তক্ষণে শাহাদাৎ বরণকারী বুদ্ধিজীবীদের অমলিন স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর একটি বেদনাময় দিন। প্রতি বছর এই দিবসটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। বাংলাদেশকে মেধা মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই পাকবাহিনীর প্রধান শিকার ছিলেন দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক বিজ্ঞানীসহ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ। তারা মনে করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এই দেশ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেয়া যাবে এবং স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
১৪ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে হানাদার বাহিনীর দোসররা এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করেছিলো। বন্দি অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। পৈশাচিক সে হত্যাকান্ড জাতির জীবনে সৃষ্টি করেছে এক গভীর ক্ষত। দেশমাতৃকার এই বরেণ্য সন্তানদের অম্লান স্মৃতি আজও আমাদের বেদনার্ত করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, যার আদর্শ হবে গণতন্ত্র। সেই স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সর্বজনীন অধিকার, সেটি সমুন্নত রাখতে আমাদের মিলিত শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আজকের এই দিনে আমি সকলের প্রতি সেই আহবান জানাই।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছিলেন তারা। নিজেদের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে বীর বাঙালি যখন অত্যাসন্ন বিজয়ের আনন্দে উন্মুখ, ঠিক তখন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর গুপ্ত ঘাতকরা রাতের আঁধারে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ঘাতকচক্র ঢাকা শহরে বিশিষ্ট শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পেশার কৃতী সন্তানদের অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে।
পরবর্তী সময় মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটভাটায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুলেটবিদ্ধ তাদের নিথর দেহ, পেছনে হাত বাঁধা, ক্ষতচিহ্ন শরীরজুড়ে। জাতি হারায় তার অসংখ্য মেধাবী সন্তানকে। একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে, সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী-সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী।
এদের মধ্যে ছিলেন ড. জিসি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দিন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমদ, খন্দকার আবু তালেব, আ.ন.ম. গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, আরপি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহী, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, সায়ীদুল হাসান, হাবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীনসহ অনেকে।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও শোকের আবহে আজ পালিত হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে নিয়েছে নানা কর্মসূচি। এতে রয়েছে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
আজ ভোর থেকেই শোকাহত মানুষের ঢল নামে সে দিনের হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে। সেখানে অর্পণ করা হবে পুষ্পার্ঘ্য। শোকবিধূর মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। দেশের সর্বত্রই আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়ানো হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি :
১। আজ মঙ্গলবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে কার্যালয়সমূহে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে সকাল ৯টায় মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে যথাসময়ে কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
২। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল সোমবার কাকরাইস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে আলোচনা সভা হয়।