নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিকাল, আজকেই বিদেশে পাঠানোর আহবান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৪ পিএম, ২৪ নভেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৮ পিএম, ৯ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪
রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল, তাই আজকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর নগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ রাজনৈতিক এবং নাগরিক সমাজের নেতারা। সেখানে তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করেন। সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা গতকাল বিকালে খালেদা জিয়ারকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। যা দেখেছি সম্প্রতিককালে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের নজরে আসেনি। খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় মিনিট, কয় দিন বাঁচবেন সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে এটা বলতে পারি খালেদা জিয়া চরম ক্রান্তিকালে আছেন। আজকে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। এই হত্যার জন্য আইনমন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও হুকুমের আসামি হবেন।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্যে আছে। যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারেন। তার অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল। মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন চিকিৎসক আমাকে বিস্তারিত বলেছে। আমি তাদের ফাইল এর প্রত্যেকটা লেখা পড়ে দেখেছি। উনার মুখ দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। ব্লাড প্রেসার একশোর নিচে নেমে এসেছে।
আমি গতকাল গিয়ে দেখেছি বেগম জিয়াকে রক্ত দেয়া হচ্ছে। আমি ফাইলের প্রত্যেকটা লাইন দেখেছি, কারো মুখের কথায় কিছু বলছি না। সম্ভব হলে আজকে রাতেই ওনাকে বিদেশে ফ্লাই করা উচিত। আর না হলে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।
রাষ্টপতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পায়খানা, প্রস্রাব পরীক্ষা করার জন্য দেশের বাইরে যান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনার একটা দায়িত্ব আছে। আপনি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারতেন।
আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আর কোন বাড়াবাড়ি কইরেন না। একজন মৃত্যুপথযাত্রীর জীবনটা রক্ষা করেন। এখন আর কোন ভানুমতির খেলা দেখাইয়েন না। অনুগ্রহ করে আজকেই বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেন। এসময় প্রধান বিচারপতিকে হাসপাতালে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টেকানোর জন্য হলেও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এইভাবে যদি বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হন তাহলে, রাষ্ট্রের ভিত্তি, নাগরিকদের অধিকারের ভিত্তিতে একটা রাষ্ট্র যেভাবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক, ঐক্য টিকিয়ে রাখে তাকে লংঘন করা হবে। ফলে দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। দেশে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে যেটা, যুগ যুগ ধরে দেশটা বিভাজনের দিকে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের শাসকসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আহ্বান জানাবো বাংলাদেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা পাওয়ার যে নাগরিক অধিকার সেটার বাস্তবায়ন করা হোক।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমরা নাগরিক ও রাজনৈতিক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে সরকারের প্রতি জোরালো দাবী করছি, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যত দ্রুত সম্ভব সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবন মরন সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। নতুবা বিনা চিকিৎসায় তাঁর কিছু হলে এ দায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বহন করতে হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য এডভোকেট হাসনাত
কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহিদুল্লাহ কায়সার, ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল প্রমূখ।
উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য আক্তার হোসেন প্রমূখ।