পীর সিন্ডিকেটের গায়েবি মামলায় রিট হাইকোর্টে চলবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৯ এএম, ৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৫২ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজারবাগ পীর সিন্ডিকেটের দায়ের করা ৪৯ মামলার বাদীদের খুঁজতে হাইকোর্টের আদেশ মোডিফাই করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে, হাইকোর্টে রাজারবাগ পীর সিন্ডিকেটের দায়ের করা রিট মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই। রিটকারী একরামুল আহসান কাঞ্চনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাজারবাগ পীর সিন্ডিকেটের দায়ের করা ৪৯ মামলার বাদীদের খুঁজতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন শুনানি নিয়ে আদেশের নির্ধারিত দিনে রবিবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এদিন আদালতে আসামি কাঞ্চনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিয়ন। অন্যদিকে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এমকে রহমান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) আপিল বিভাগের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চ আদেশের জন্য ধার্য করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর এই রিভিউ শুনানি থেকে সরে যান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তারও আগে গত ১৯ অক্টোবর ৪৯ মামলার বাদীদের খুঁজতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বারজজ আদালত। এ বিষয়ে গত ২৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও সেদিন শুনানি না হওয়ার ধারাবাহিকতায় ২৮ অক্টোবরের কার্যতালিকায় ওঠে।
অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির জানান, গত ৭ অক্টোবর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে তার আইনজীবী এ রিভিউ আবেদন করেন। এর আগে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলার নেপথ্যে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমানের মুরিদদের নাম উঠে আসে। হাইকোর্টের নির্দেশনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষ থেকে আদালতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনের ওপর এখনো শুনানি হয়নি। এরপর রিটকারী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে চলমান সব মামলার বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিআইডিকে দেওয়া তদন্তাদেশসহ হাইকোর্টের পুরো অন্তর্র্বতীকালীন আদেশটি স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে সিআইডির প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করতে গেলে আদালত শুনানি না করে সেটি কার্যতালিকা থেকে বাদ (ডিলিট) দিয়ে আদেশ দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সিআইডিকে তদন্ত করতে দেওয়ার আদেশসহ হাইকোর্টের সেই পুরো অন্তর্র্বতীকালীন আদেশটি স্থগিত করেন। রিট আবেদনকারী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে চলমান সব মামলার বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশটি স্থগিত করা হয়। পরে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা আপিল বিভাগের আদেশের সার্টিফায়েড কপি হাইকোর্টে দাখিল করেন। আপিল বিভাগের আদেশ দেখে তখন হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, যেহেতু আবেদনকারীর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্র্বতীকালীন আদেশের ওপর আপিল বিভাগ থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, ফলে এ মুহূর্তে রিট মামলায় অন্য কোনো আদেশ দেওয়া সম্ভব নয়। এ মর্মে হাইকোর্ট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদেশ দেন। রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনি কয়েক বছর কারাভোগ করেন। পরে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। কাঞ্চনের দাবি, তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা ভুয়া। একরামুল হক কাঞ্চনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে দেশের ১৩ জেলায় ৪৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২০টি মামলায় এক হাজার ৪৬৫ দিন কারাভোগ করেন তিনি। ২০টি মামলার মধ্যে পাঁচ মামলার বাদী আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এর মধ্যে চারটি মামলা চলমান। তবে একরামুলের বিরুদ্ধে আবুল বাশারের করা মামলাটি ২০১৫ সালে বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আপিল বিভাগে শুনানিতে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন কোনো পক্ষই দাখিল করেনি। তাই আপিল বিভাগের আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়। উল্লেখ্য, জামিনে বের হয়ে ওই সব মামলা ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে মামলা দায়েরে সম্পৃক্ত বা বাদীকে খুঁজে বের করতে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ৭ জুন রিট করেন একরামুল। নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরে অবস্থিত আনোয়ার ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ের মালিক একরামুল।