আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
ভুলে যাই আমি বাণিজ্যমন্ত্রী না ব্যবসায়ী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৪ এএম, ১৮ অক্টোবর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০০ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, কখনো কখনো ভুলে যান যে, তিনি ব্যবসায়ী না কি বাণিজ্যমন্ত্রী।
আজ রবিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডিসিসিআই’র যৌথ আয়োজনে এই সামিট ২৬ অক্টোবর শুরু হয়ে ১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যদিও আমি বাণিজ্যমন্ত্রী তারপরও প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সে জন্য কখনো কখনো আমি ভুলে যাই আমি বাণিজ্যমন্ত্রী না ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, আমি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসি তখন ওই পরিচয়টা পেয়ে যাই। জানি না আমরা কখন একাকার হয়ে গেছি। আমরা সবাই জানি দেশটা কোথায় এসেছে, কোথায় ছিল। কথা হয়, সমালোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলায় একটা কথা বলা হয়, সেটা আমরা জানি সবাই। সেটা সংস্কৃত থেকে এসেছে। আর তা হচ্ছে- ‘বৃক্ষ তার ফলে পরিচয়।’ তো বাংলাদেশের আজকের যে পরিচয়, সেটা কী হয়েছে? যেটা আমরা অলরেডি দেখছি সেটাই কিন্তু পরিচয়। যে যা বলছি সেটা বলতে পারি। কিন্তু যেটা দেখেছি সেটাই মূল। রিজার্ভের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি এটা সর্বকালের রেকর্ড। একটা সময় ছিল, কখন বিদ্যুৎ আসে সেটার জন্য অপেক্ষা করতাম। আমি উত্তরবঙ্গের মানুষ। এখন আমার অঞ্চলে শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। সারাদেশের হিসাব করলে ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান উপস্থিত ছিলেন।
এতে জানানো হয়, গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সামিটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সামিটে ৩৮টি দেশের ৫৫২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এর মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ২৮১টি এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান ২৭১টি। সপ্তাহব্যাপী এই সামিটে ৪৫০টি বি টু বি (বিজনেস টু বিজনেস) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা প্রতিনিয়ত মিটিং করে যাচ্ছি। যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে বলে কথা বলা হচ্ছে, যেমন-তেল, চিনি প্রত্যেকটা পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেড়েছে। তাই আমাদের দেশে এর প্রভাব পড়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গরিব কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছি। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজে আমাদের ২০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। যার ৯০ শতাংশ আমরা ভারত থেকে আমদানি করে পূরণ করি। ভারত যখন দাম বৃদ্ধি করে দেয়, তখনই আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়ে। মিসরসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করাটা অনেক সময়ের ব্যাপার, অনেক সময় আমদানিকালে পথিমধ্যে পচে যায়। এ বিষয়টি সকলকে বুঝতে হবে। রফতানিতে ৫১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রফতানিতে আমরা তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছি। এ খাত থেকে ৮৩-৮৪ শতাংশ রফতানি আয় আসে। আমরা চাই অন্যান্য পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি হোক। আমাদের যেন একটা পণ্যের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা না থাকে। আমরা সেই অবস্থা থেকে বের হতে চাচ্ছি। চামড়া, পাট, প্রযুক্তি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইলস ও প্লাস্টিক ইত্যাদি খাতে আমরা ভালো করছি। রফতানি চলতি বছরে ৫১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আশা করছি আমরা সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো।
এবারের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে অবকাঠামো, আইটি, চামড়াজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, এগ্রো অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং, প্লাস্টিক পণ্য, এফএমসিজি (ফার্স্ট মুভিং কনজিউমার গুডস) এবং জুট ও টেক্সটাইল পণ্য থাকবে।