দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে পুলিশ জয়ী হবে-আইজিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩১ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০৪:৩৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে পুলিশ জয়ী হবে, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমরা যারা পুলিশ বাহিনীতে আছি সবাই সম্মানের সঙ্গে চাকরি করতে চাই। দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করছে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট এবং পাবলিকলি বলি, যারা পুলিশে দুর্নীতি করতে চান তারা চাকরি ছেড়ে দিন। পুলিশে দুর্নীতির সুযোগ নেই। অন্য পেশার মানুষ কে কী করলো সেটা জনগণ ভাবে না, কিন্তু পুলিশ দুর্নীতি করলে দেশের মানুষ সমালোচনা করে। ভবিষ্যতে যারা এই পেশায় আসবেন তাদের মনে কোনও খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে তাদের এ চাকরিতে আসার দরকার নেই।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত “পুলিশে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার প্রচলন” অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পুলিশ জনগণ নিয়ে কাজ করে। আর জনগণ নিয়ে কাজ করতে গেলে পুলিশে আচরণগত পরিবর্তিত আনতে হবে। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই- পুলিশে এই জায়গায় পরিবর্তন আনার জন্য গুণগত কাজ করে যাচ্ছি। পরিবর্তন অনেক সময় ও কষ্টসাধ্য বিষয়, তবে পরিবর্তনের সেই প্রয়াস আমরা শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ এই পরিবর্তনের সুফল দেশবাসী শিগগিরই পাবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ী জাতি, বীরের জাতি। যখনই আমরা কোনও বিষয়ে মনোসংযোগ করেছি, লক্ষ্য ঠিক করেছি তখনই বাঙালি জাতি সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে।
আইজিপি বলেন, উন্নত বিশ্বে রুটিন ডিউটিতে পুলিশ ভারি অস্ত্র ব্যবহার করেন না। এখন থেকে আমরাও সেই বিষয়টির প্রচলন করতে চাই। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আজ বুধবার থেকে এটি ব্যবহার করবে। এরপর ধাপে ধাপে সবক্ষেত্রে এটির প্রচলন করা হবে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে ডিএমপি ও সিএমপি তাদের সদস্যদের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা কোনও ধরনের অস্বস্তি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
আমরা চাই না ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ এক হাতে ওয়্যারলেস ধরে থাকুক, এক হাত অকোপাইড হয়ে থাকুক। নতুন গিয়ার সংযোজনের ফলে ওয়্যারলেস চলে যাবে বেল্টে। কাঁধে সংযোজিত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যরা ওয়্যারলেস ব্যবহার করতে পারবেন।
অপারেশনাল গিয়ার সংযোজনকে পুলিশের হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন উল্লেখ করে আইজিপি আরও বলেন, এর পাশাপাশি সফটওয়্যারগত পরিবর্তন অর্থাৎ আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। আমরা চাই পুলিশের সর্বকনিষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ পদের সদস্যদের আচরণ হবে সর্বোচ্চ অনুকরণীয়। হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন করে প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব না, এজন্য সফটওয়্যারগত পরিবর্তন দরকার। মনোজগতের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা দ্রুতই নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।
রুটিন ডিউটিতে পুলিশের ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়বে এবং এর সুবিধা দেশবাসী ভোগ করবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
পুলিশে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ারের সঙ্গে সংযুক্ত অস্ত্র আমদানি করা হয়েছে কি-না এবং আগে ব্যবহৃত বড় অস্ত্রগুলো বাতিল হয়ে যাবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বেনজীর বলেন, অস্ত্র আমরা তৈরি করি না। অস্ত্র আমাদের আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে বড় অস্ত্র বাতিল হবে না। তবে থানার গেটে, জঙ্গি, হাঙ্গা-দাঙ্গামা ও রাজনৈতিক কোনও প্রোগ্রামে বড় অস্ত্রের ব্যবহার হবে।
নতুন এই সংযোজনের সঙ্গে ‘বডি অন ক্যামেরা’ যুক্ত হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমি যখন ডিএমপি কমিশনার ছিলাম তখন থেকেই ডিএমপি পুলিশের শাহবাগে বডি অন ক্যামেরা যুক্ত করি। হয়তো এটা বিস্তৃত হয়নি, চলতি বছর থেকে আমরা পর্যায়ক্রমে বিস্তৃত করবো।
অনেকগুলো পত্রিকা শিরোনাম করেছে ‘থানায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়’। কোনও আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যখন এই ধরনের তথ্য আসে তখন থানা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, থানায় কোনও হত্যার পরিকল্পনা হতে পারে না। থানা হলো মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য, কোনও মানুষের জীবন নেয়ার জন্য নয়।
যেভাবে কাজ করবে এই অপারেশনাল গিয়ার-
১। পুলিশ সদস্যদের কর্মদক্ষতা ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দায়িত্ব পালনকালে হাত খালি বা হ্যান্ডস ফ্রি রাখা।
২। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রুটিন দায়িত্ব পালনকালে ভারি ও বহনে কষ্টকর লং আর্মসের পরিবর্তে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য শর্ট আর্মস ব্যবহার করা।
৩। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে অধিক ক্যাজুয়ালটি এড়াতে অত্যাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লং ব্যারেল আর্মসের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনা।
৪। পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘক্ষণ দায়িত্ব পালনকে সহজ করে কমফোট দেয়ার ব্যবস্থা করা।
৫। ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ধারা থেকে বেরিয়ে আসা।
৬। বিশ্বের অপরাপর আধুনিক দেশের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা।
৭। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং পুলিশি সেবাকে আরও সহজসাধ্য করা।
সর্বাধুনিক এই অপারেশন গিয়ার চালু করার বিশেষত্ব : একজন পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব পালনকালে যেসব সরঞ্জামদির প্রয়োজন হয়, তার সবগুলোই এই অপারেশন গিয়ারের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। জনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো এমনভাবে সংযোজন করা হয়েছে, যাতে দায়িত্ব পালনকালে একজন পুলিশ সদস্য খুব সহজেই দরকারি জিনিস মুহূর্তের মধ্যেই পেয়ে যান।
ট্যাকটিক্যাল বেল্টের সঙ্গে থাই হোলস্টার যুক্ত করে সেখানে স্মল আর্মস রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বেল্টের সঙ্গে এক্সপ্যান্ডেবল ব্যাটন, টর্চলাইট, হ্যান্ড কাফ ও ওয়াটল বটল রাখার সুযোগ রয়েছে।
জরুরি মুহূর্তে দ্রুত মেসেজ আদান প্রদান নিশ্চিত করতে ওয়ালেস সেটের সঙ্গে একটি মাইক্রোফোন ও ওয়ালেস সেট জুড়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যগণ ওয়ালেস সেট মুখের কাছে না এনেই মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারবেন।
নতুন এই অপারেশন গিয়ার চালু করায় পুলিশ সদস্যদের আগের মতো কাঁধে বা হাতে করে অস্ত্র বহন করতে হবে না। হাত ফাঁকা থাকায় জনগণের যেকোনও প্রয়োজনে দুহাত ব্যবহার করেই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যেতে পারবেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও সর্বাধুনিক এই অপারেশন গিয়ার বাংলাদেশ পুলিশকে একটি স্মার্ট লুক এনে দেবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. মাঈনুর রহমান চৌধুরী।