জাতীয় নির্বাচনে যথাযথ দায়িত্ব পালন করায় পুরস্কৃত পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৬ পিএম, ১০ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০৯ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘যথাযথ’ দায়িত্ব পালন করায় পুরস্কৃত হলেন ওই তিন নির্বাচনী কাজে যুক্ত পুলিশ সদস্যরা। এই পুরস্কার হিসেবে এসব পুলিশ সদস্যরা একটি পদক ও রিবন পরতে পারবেন। তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি দিতেই এই পদক ও রিবন প্রবর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই পদক ও রিবন পুলিশ সদস্যদের নিজ খরচে বানিয়ে পরতে হবে। শুধু পদক ও রিবন পরার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্ধারিত নির্দেশিত ও ডিজাইন অনুসরণ করতে হবে। গত ২৯ জুলাই এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের লজিস্টিক শাখা থেকে একটি আদেশ পাঠানো হয়েছে পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানের কাছে।
এ আগে পদক ও রিবনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে যে নির্দেশনা পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে; তার সঙ্গে ওই প্রজ্ঞাপন ও পদকের প্রিন্ট কপি সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়, নির্বাচনের সাল ভিত্তিতে পদকের নামকরণ করা হলো। এ পর্যায়ে নবম সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে পদকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সংসদীয় নির্বাচন ডিসেম্বর ২০০৮’, দশম সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘সংসদীয় নির্বাচন জানুয়ারি ২০১৪’ এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে পদকের নাম ‘সংসদীয় নির্বাচন ডিসেম্বর ২০১৮’ নামকরণ করা হয়েছে। ওই তিন নির্বাচনে যেসব পুলিশ সদস্য নির্বাচনী কাজে তালিকাভুক্ত ছিলেন তারা সংশ্লিষ্ট সালের পদকের জন্য বিবেচিত হবেন বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তিনটি পদকই একই ধরনের হবে। রিবনের আকারও হবে এক। তবে রঙে ভিন্নতা থাকবে। পদক হবে সাদা শংকর ধাতুতে তৈরি। আকৃতি হবে ষড়ভুজ। দুই বিপরীত কোণের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে ৩৫ মিলিমিটার। পদকের সামনের দিকে বর্গাকৃতি ব্যালট বাক্সের ছিদ্রে ভাঁজ করা ব্যালট পেপার অর্ধাংশ উৎকীর্ণ থাকবে। তিনটি পদকের ওপরে সংসদীয় নির্বাচন এবং নিচে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মাস ও সালের নাম লেখা থাকবে। পদকের পেছনের দিকে মধ্যভাগে সংসদ ভবন ও ওপরে বাংলাদেশ উৎকীর্ণ থাকবে।
পদকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, এই পদক সংবিধান পদকের থেকে ছোট হবে। পোশাকে সংবিধান পদকের পরবর্তী কনিষ্ঠ স্থানে পরতে হবে। রিবন পরার ক্ষেত্রেও এই জ্যেষ্ঠতা বজায় থাকবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী রিবনগুলোর মাপ এক হলেও রঙে ভিন্নতা থাকবে। ২০০৮ সালের পদকের রিবনের মধ্যভাগ হবে সাদা। উভয় পাশে সবুজ গাঢ় খয়েরি এবং দুপাশে অর্থাৎ খয়েরি রঙের উভয় পাশে লাল রঙ থাকবে। প্রস্থ হবে ৬ মিলিমিটার। ২০১৪ সালের পদকের রিবনের মধ্যভাগ সাদা, উভয় পাশে লাইট গ্রে এবং দুই পাশ গাঢ় লাল হবে। ২০১৮ সালের পদকের রিবনের মধ্যভাগ সাদা, উভয় পাশে হালকা গোলাপি এবং দুই পাশ গাঢ় লাল হবে।
এদিকে তিন নির্বাচনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অনেক ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনে যুক্ত ছিলেন র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া নির্বাচনী কাজে যুক্ত সরকারি অন্যান্য দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই নির্বাচনকালে অনেক জায়গাতেই নির্বাচনী অফিস জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটে নির্বাচনের আগে-পরে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই চিত্র তেমনটা দেখা যায়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে চারটি ক্যাটাগরিতে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদক দেওয়া হয়ে থাকে। এই পদকের সঙ্গে তারা এককালীন আর্থিক প্রণোদনা পান। এ ছাড়া প্রতিবছর পদক ভাতাও পান। তবে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে যে পদক ও রিবন দেওয়া হচ্ছে; তার সঙ্গে কোনো আর্থিক বিষয় নেই।
বিগত ৩টি জাতীয় নির্বাচনে ‘যথাযথ’ দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশকে পদক ও রিবন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পদক তারা পাইলে তো আমাদের ইলেকশন কমিশনকেও দিতে হবে। ন্যাশনাল পদক দেওয়া উচিত ইলেকশন কমিশনকে, আগে-পরে যারা ছিলেন। এটা এখন সরকারের সিদ্ধান্ত, এগুলো করে কী অর্জন হবে তা আমি বলতে পারব না। তা হলে যারা ইলেকশন পরিচালনা করেছে, তাদেরকেও পদক দেওয়া উচিত। কারণ এত ভালো ইলেকশন তো তারা একা করেনি। এখন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আর হোম মিনিস্ট্রি জানে- কোন ক্রাইটেরিয়ায় তারা কী জন্য দিচ্ছে।