স্বল্পমূল্যে প্রতিটি মানুষের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে হবে-প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৭ এএম, ৫ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০৪:৫৪ এএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মানসম্পন্ন ভ্যাকসিনগুলো সর্বজনীন, সঠিক সময়ে, সাশ্রয়ী মূল্যে এবং এর ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সর্বত্র সংক্রমণ থামানো না গেলে কোভিড-১৯ কখনোই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একটি টেকসই বিশ্বের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা সম্পাদনে নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি নেই, যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভবিষ্যতের মহামারি মোকাবিলায় সক্ষম হবে।’
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে আগে থেকে ধারণকৃত বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি টেকসই বিশ্বের জন্য কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রথমত, ‘মানসম্পন্ন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সর্বজনীন, ন্যায়সঙ্গত, সময়োপযোগী এবং সাশ্রয়ী মূল্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সমতার নীতি দ্বারা পরিচালিত এসডিজি অর্জনে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি দেয় ২০৩০ সালের উন্নয়ন এজেন্ডা।
‘একইভাবে, যখন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির কথা আসে তখন কাউকে পেছনে রাখা উচিত হবে না। এটি মহামারি মোকাবিলায়, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আমাদের সহায়তা করবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক জনপণ্য’ বিবেচনা করতে হবে উল্লেখ করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি এবং সুবিধার উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’
তৃতীয়ত, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে বলে জানান তিনি।
‘জাতীয় সরকারসমূহের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আইএফআই, সুশীল সমাজকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একে অপরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যে ১৪ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রতিদিন আরও অনেকেই মারা যাচ্ছেন।
করোনা মহামারি অনেক মানুষকে আরও দরিদ্র করে তুলেছে এবং অনেকেই ক্রমে দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব দেশে অপুষ্টি, বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা চেপে বসছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে।’
এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনে ব্যাপক ধস নামায় মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও এ মহামারি আমাদের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণের এবং তা আরও উন্নত করতে এই সংকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে।’
‘দুর্ভাগ্যক্রমে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। অনেক দেশই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে পড়ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতি, আমাদের জীবন ও জীবিকা, আমাদের অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে এবং আমাদের কষ্টার্জিত উন্নয়ন সাফল্যকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
‘তবে আমরা শুরু থেকেই এবং কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করেছি এবং আমাদের অর্থনীতি ও জনগণকে মহামারি থেকে রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি জানান, সরকার ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব হ্রাস করতে ১৪.১৪ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশের জিডিপির ৪.৩ শতাংশের সমান।
কোভিড মহামারিটির দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।