ইসির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৬ এএম, ১০ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০২ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে ইসির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
আজ বুধবার সকালে ভার্চুয়ালি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সুজন নেতৃবৃন্দ।
কর্মসূচির উদ্বোধনকালে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, কমিশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্ত করার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। যদিও আমরা কোনও সাড়া পাইনি, কিন্তু আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তারই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের এই কর্মসূচি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ইসিকে আইনের আওতায় এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম আমরা। এখন আমরা গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সিআর আবরার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম যেখানে নাগরিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন। এটা বাড়তি কোনো চাওয়া না। যারা রাষ্ট্রের মালিক তারা চাইতেই পারেন। অতীতে নির্বাচন কমিশনের ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও মেনে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোটাধিকারের নির্বাসন কমিশন হয়েছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের অসদাচরণ, গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এটার একটা বিহিত হওয়া দরকার। আমরা ২টা চিঠি লিখেছিলাম মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে। কিন্তু তার দফতরে চিঠি গেলেও সে রকম স্বীকৃতিমূলক রেসপন্স পাইনি। এই ইস্যু শুধু সামনে আনাই দরকার নয়, নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া দরকার। গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে নাগরিকরা এ সুযোগ নিতে পারে।
তিনি বলেন, অতীতেও কমিশন অনেক কারসাজি করেছে, কিন্তু এই কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুতর অসদাচরণের পাশাপাশি নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে দুটি চিঠি পাঠাই। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল- আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সামান্য প্রাপ্তি স্বীকারের স্বীকৃতিমূলক সৌজন্যতাবোধ পর্যন্ত পাইনি। অন্যান্য অনেক বিষয়ের ভিড়ে এটি হারিয়ে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুটা শুধু সামনেই আনাই দরকার নয়, নাগরিকদেরও এর পক্ষে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্টের কাছে এ আবেদন করেন তারা। এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে অনুরোধও জানিয়েছেন তারা। তাদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, নির্বাচন কমিশনারদের বিশেষ বক্তা হিসেবে ২ কোটি টাকার বেশি গ্রহণ, কর্মচারী নিয়োগের নামে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার দুর্নীতি, নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনটি করে গাড়ি ব্যবহার এবং ইভিএম কেনায় অনিয়ম। এছাড়া অসদাচরণের মধ্যে রয়েছে- একাদশ জাতীয় সংসদ, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম। চিঠিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানিয়েছেন তারা।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধনকালে সুজন ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৪২ জন নাগরিকের দাবিটি দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি। কারণ একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা গণতন্ত্রের একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। তাই ৪২ নাগরিকের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সুজন অনলাইনে এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেছে।