প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বিতর্কিত করা ছোট অপরাধ নয় - হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩১ এএম, ৯ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:১০ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
হাইকোর্ট বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বিতর্কিত করা কোনো ছোট অপরাধ নয়। এটাকে নমনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আদালত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে কেন বিতর্কিত করেন? রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই অফিসকে কেন প্রশ্নের সম্মুখীন করেন? আপনার কাছে এ ধরনের অপরাধ ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু এটাকে নমনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নাই। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এমন মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুনের জামিন আবেদনের ওপর শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। আদালত ফাতেমাকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ফাতেমার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায়।
শুনানিতে আইনজীবী বলেন, তিনি অসুস্থ। গতবছর ১০ মে থেকে কারাগারে আছেন। এ সময় আদালত বলেন, জেলখানায় গেলেই কি সবাই অসুস্থ হয়ে যায়? কিছু করার নাই। জামিন হবে না। পরে আইনজীবীর আবেদনে রুল জারি করা হয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির অভিযোগে গতবছর ৫ মে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়। এ মামলায় তদন্ত শেষে গতবছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারি ফাতেমা খাতুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অপর আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মমিন, মো. নাজিম উদ্দিন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এয়ার কমোডর (অব.) এম আব্দুস সালাম আজাদ। এরপর ওইবছরের ১০ মে নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও মামলায় আরো চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এয়ার কমোডর (অব.) এম আব্দুস সালাম আজাদ পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত গতবছর ৮ ডিসেম্বর এক আদেশে মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টের ওপর একটি বেঞ্চ গত ১৮ জানুয়ারি মামলাটি দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর দুদক তদন্ত শুরু করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে ‘টিক’ চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতির সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে ফাইল গেলে তিনি এই গোপনীয় তথ্য ফোনে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে জানিয়ে দেন। এরপর গতবছর পহেলা মার্চ নথিটি কৌশলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বের করে ফরহাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে ‘টিক’ চিহ্ন টেম্পারিং করে ক্রস চিহ্ন দেয়। এছাড়া অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফের নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন দেয়া হয় এবং আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে তা গতবছর ৩ মার্চ রাষ্ট্রপতির দফতরে পাঠানো হয়। এ অবস্থায় জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।