বেক্সিমকোর চাপের কারণে সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারেনি - রুমিন ফারহানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৮ এএম, ৭ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৮ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের সমালোচনা করে এর দক্ষতা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
আজ রবিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন তিনি।
এ সময় করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন রুমিন। তিনি বলেন, টিকা ব্যবস্থাপনায় শুরু থেকেই নয়ছয় দেখেছি। বেক্সিমকোর চাপের কারণে সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারেনি। যদিও রাশিয়া ও চীন আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল। টিকা বিক্রি করে সরকারি দলের এক অতি ক্ষমতাসীন ব্যক্তির লাভের জন্য রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলেছে।
রুমিন ফারহানা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও বিগত ১০ বছরের স্বাস্থ্যসেবায় এডিপি বাস্তবায়ন এই বছরের সবচেয়ে কম। প্রথম ১০ মাসে বরাদ্দের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এরপর নতুন করে বরাদ্দ বাড়ানো কতটুক যৌক্তিক সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ৩০ হাজার কোটি টাকা কমে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালে দেয়া বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ, ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমার’। করোনাকালে উন্নয়নের সংজ্ঞা ছিল জীবন এবং জীবিকা। এই দুই খাতে ভীষণভাবে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট। সম্পূরক বাজেটে ১৯টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধির তালিকা দেয়া হয়েছে। তাতে যেসব মন্ত্রণালয় বাদ পড়েছে সেসব মন্ত্রণালয় হচ্ছে- কৃষি, সমাজকল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসস্থান মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে কৃষিতে বরাদ্দ ছিল অপ্রতুল। এই বাজেটে আরো কমেছে। খাদ্যশস্যের আমদানি সাম্প্রতিক অতীতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। কিছু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করার কথা বললেও দেখা যাচ্ছে চলতি অর্থবছরে প্রথম দশ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও বিগত ১০ বছরে স্বাস্থ্যসেবায় এডিপি বাস্তবায়ন এই বছরের সবচেয়ে কম। প্রথম ১০ মাসে বরাদ্দের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। অথচ করোনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব ছিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
তিনি বলেন, অর্থ খরচে এতো অদক্ষতা দেখিয়েছি সেই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানো যে কি? সেটা দেশের মানুষ ভাল জানে। বরাদ্দকৃত অর্থ খরচে স্বাস্থ্য খাতে ন্যূনতম কোনো প্রতিফলন দেখতে পাইনি।
এ সময় জাতীয় সংসদে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান এমপি রুমিন ফারহানা। এছাড়া সচিবালয়ে রোজিনাকে ৬ ঘন্টা ধরে যে হেনস্তা করা হয়েছে, আর যারা এ জন্য দায়ী তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটাও স্পিকারের মাধ্যমে সরকারের কাছে জানতে চান।
রুমিন ফারহানা বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের ভয়ঙ্কর দুর্নীতির খবর এসেছে। হেলথ টেকনিশিয়ান নিয়োগে মাথাপিছু ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম যখন- ‘এখন এক কোটি নিন, পরে এক কোটি পাবে’, ‘৩৫০ কোটি টাকার জরুরি কেনাকেটা নিয়ে অনিয়ম’, ‘টিকা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য’, ‘রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি গোপনীয়তার’- ইত্যাদি শিরোনামের নানা রিপোর্টে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরেছেন তখন তাকে চরমভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মানুষের চিন্তা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং উন্মুক্ত গণমাধ্যমের স্বার্থে রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, রোজিনাকে ৬ ঘন্টা ধরে হেনস্তা করা হলো, যারা এর জন্য দায়ী তাদের ব্যাপারে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাও আমি আপনার মাধ্যমে জানতে চাই।’
রুমিন বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট বলতে চাই, কোনো গণমাধ্যমকে তার রিপোর্ট প্রকাশের জন্য যদি হেনস্তার শিকার হতে হয়, জীবন হুমকির মুখে পড়তে হয়, তখন আর কোনো গণমাধ্যমই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বিশ্ব গণমাধ্যম সূচককে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। এমনকি মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানের অবস্থাও বাংলাদেশের চাইতে ভালো।