বিদেশে অর্থপাচারকারীরা দেশের শত্রু-হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৩ এএম, ২৩ নভেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৪৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিদেশে অর্থপাচারকারীদের দেশের শত্রু বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, যারা দেশের টাকায় লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে বিদেশে অর্থপাচার করছে, তারা কখনো দেশের বন্ধু হতে পারে না। তারা জাতির সাথে বেঈমানি করছে।
আজ রবিবার (২২ নভেম্বর) স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশ দেয়ার সময় হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য হাজির করার আদেশ দেন।
আদালত এ সময় অর্থপাচারকারীদের নাম-পরিচয়সহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে আদেশ দেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে অর্থপাচারের ঘটনায় রুল জারি করেন আদালত। রুলে অর্থপাচারকারী সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
আদালত বলেন, ‘হিউজ (বিপুল) পরিমাণ বাংলাদেশি টাকা কানাডা, মালেয়শিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে এবং অধিকাংশ (পাচারকারী) সরকারি কর্মকর্তা। এই যে টাকাগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছে, তাদের নাম-ঠিকানা কী, সেটা তো জানা দরকার। তারা কীভাবে মানিলন্ডারিং করলো? যারা মানিলন্ডারিং করলো তারা দেশ ও জাতির শক্র। তারা দেশ ও জাতির সাথে বেঈমানি করছে বলে মনে করি। কারণ দেশে পড়াশোনা করে দেশের মাটিতে থেকে দেশের বাইরে টাকা পাচার করবে, এটা কি বেঈমানি নয়? কাজেই এগুলো আমাদের দেখা দরকার। কীভাবে বিদেশে বাড়ি তৈরি করলো, এটা জানা দরকার। না হলে তো অপরাধটা কমবে না। এ সময় দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, এটা কালচার হয়ে গেছে। তখন আদালত বলেন, দেশের মাটিতে থাকবো, দেশে পড়াশোনা করবো, কিন্তু আল্টিমেটলি দেশকে ঠকিয়ে দেশের টাকা দেশের বাইরে পাচার করবে, এটা তো হতে পারে না। এটা কীভাবে সম্ভব? দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে এটা কখনো করতে পারে না। এভাবে তো আমরা দুর্বৃত্তদের অ্যালাউ করতে পারি না। দেশের টাকা দেশের বাইরে আনঅথরাইজলি চলে যাবে এবং অবৈধ পথে যাবে, আমাদের এতগুলো আইনগত সংস্থা, কোর্ট আছে। আমাদের অবশ্যই এগুলো বন্ধ করতে কাজ করতে হবে।
যদি আমরা মনোযোগ না দেই, সবাই যদি কাজ না করি দেশকে উন্নত করার জন্য, কীভাবে উন্নত হবে? আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। অর্থপাচার, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
আদালত এ সময় আদেশ দিয়ে বলেন, যারা দুর্বৃত্ত, বিদেশে টাকা পাচার করছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো- অবৈধভাবে কোনো টাকা পাচার করা যাবে না।
আদেশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৯, ২০ ও ২১ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের ওপর খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে বেশি অর্থপাচার করেন সরকারি কর্মচারীরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেসব খবর আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুল জারি করেছেন।
এর আগে গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে বেশি অর্থপাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকেন। আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি।
তার এ বক্তব্য নিয়ে দেশের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে স্বঃপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দিলেন।