বিলবাওকে হারিয়ে কোপা দেল রে’র শিরোপা জিতলো বার্সেলোনা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:২১ পিএম, ১৮ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:২৪ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বেশি না, মাত্র সোয়া এক বছর আগের কথা। গতবার এই কোপা দেল রে’র কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বার্সেলোনাকে বিদায় করে দিয়েছিল অ্যাথলেটিক বিলবাও। এটা কাঁটা হয়ে বিঁধে ছিল মেসিদের বুকে।
সোয়া এক বছর পর সেই অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষেই মধুর বদলা নিল বার্সেলোনা। সেই বিলবাওকে হারিয়েই কোপা দেল রে’র শিরোপা ঘরে তুলেছে বার্সেলোনা।
জোড়া গোল করে দলের সেরা পারফর্মার আবারও লিওনেল মেসি। হ্যাঁ, সেই মেসি, যে মেসির ভবিষ্যৎ এখনো ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। সেই মেসি, যে মেসি কয়েক মাস আগেই ক্লাবকর্তাদের ওপর তিতিবিরক্ত হয়ে ক্লাব ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন।
সেই মেসি, যে মেসি এখনো ক্লাবের হয়ে নতুন চুক্তিতে সই করেননি, যে মেসির সামনে এখনো অন্যান্য ক্লাবের হাতছানি। কিন্তু আর্জেন্টাইন এই তারকা যেভাবে গত রাতে খেললেন ও খেলালেন, কে বলবে এই তারকা কিছুদিন আগে এতটা অখুশি ছিলেন?
বার্সেলোনা যে মানের দিক দিয়ে বিলবাওর চেয়ে কতটা ভালো, সেটা বোঝাতে মেসিরা সময় নিয়েছেন মেরেকেটে ১৩ মিনিট। দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ থেকে ৭২ মিনিট পর্যন্ত চারটা গোল হয়েছে বার্সেলোনার। ৬০ মিনিট গোলহীন থাকার পর বিলবাওর বাঁধ সবার আগে ভেঙে দেন বার্সার ফরাসি ফরোয়ার্ড আতোয়ান গ্রিজমান। তিন মিনিট পরেই ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলেন।
এর পরেই ‘মেসি-শো’—৬৮ ও ৭২ মিনিটে পরের দুটি গোল করেন দলের অধিনায়ক। বিশেষ করে মাঝমাঠ থেকে ছুটে এসে ডি ইয়ংয়ের সঙ্গে ওয়ান-টু করে নিজের প্রথম গোলটা যেভাবে করলেন, কে বলবে এই লোক কিছুদিন পর ৩৪-এ পড়বেন?
সম্প্রতি ৩-৫-২ ছকে দলকে মাঠে নামিয়ে বেশ সাফল্য পেয়েছেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমান। মৌসুমের একমাত্র ট্রফি জেতার সবচেয়ে বড় সুযোগের দিনে সে ছক থেকে বেরোতে চাইলেন না তিনি।
গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনের সামনে তিন সেন্টারব্যাক জেরার্ড পিকে, অস্কার মিঙ্গেসা ও ক্লেমঁ লংলে, সামনে দুই উইংব্যাক- ডান দিকে সের্হিনিও দেস্ত ও বাঁ দিকে জর্দি আলবা; এভাবেই সেজেছিল বার্সেলোনা। দুই মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও সের্হিও বুসকেতস।
সামনের স্ট্রাইকার আতোয়ান গ্রিজমানের দুপাশে পেদ্রি ও মেসি। ফরাসি উইঙ্গার উসমান দেম্বেলেকে শুরুতে নামান হয়নি। ওদিকে বার্সাকে আটকাতে বিলবাওর কোচ মার্সেলিনিও আশ্রয় নিয়েছিলেন ৪-৪-২ ছকের।
ম্যাচের পাঁচ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। ডি-বক্সের মধ্যে মেসির কাটব্যাক থেকে গোলমুখে শট মারেন ডি ইয়ং, গোলরক্ষক উনাই সিমোন পরাস্ত হলেও বল লাগে পোস্টে। ১২ মিনিটে গোল করার সুযোগ পায় বিলবাও। উইঙ্গার অ্যালেক্স বেরেঙ্গেরের ফ্রি-কিকে পা ঠেকিয়ে আরেকটু হলে গোল দিয়ে দিচ্ছিলেন সেন্টারব্যাক ইনিগো মার্তিনেজ। যদিও শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৩৯ মিনিটে মেসিকে ডি-বক্সের একটু আগে অন্যায়ভাবে ফেলে দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার দানি গার্সিয়া। সেখান থেকে পাওয়া ফ্রি-কিক থেকে যদিও মেসি কিছু করতে পারেননি। প্রথমার্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনা এগুলোই।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরও আক্রমণাত্মক কৌশলের আশ্রয় নেয় বার্সেলোনা। ৪৮ মিনিটে রাইট উইংব্যাক দেস্তের ক্রস ট্যাপ ইন করতে গিয়ে বিলবাও গোলরক্ষক সিমোনের বাধাপ্রাপ্ত হন গ্রিজমান। ৫২ মিনিটে গ্রিজমানের কাটব্যাক থেকে বক্সের বাইরে থেকে পেদ্রির নেওয়া ডান পায়ের জোরালো শট পড়িমরি করে আটকান সিমোন।
এর একটু পরেই জর্দি আলবার মাপা ক্রস বক্সে পড়লে সেটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে একটু গুবলেট পাকিয়ে ফেলেন বিলবাওর মার্তিনেজ। তাঁর শট সতীর্থ ইনিগো লেকুয়ের পিঠে লাগলে বল চলে আসে একদম সিমোনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বুসকেতসের কাছে। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে বুসকেতসের সে শটটাও ঠেকিয়ে দেন সিমোন।
তবে ৬০ মিনিটে বিলবাও আর সিমোনের সব বাধা কাটিয়ে দলকে এগিয়ে দেন গ্রিজমান। মাঝমাঠ থেকে মেসি বল পাঠিয়েছিলেন ডান উইংয়ে থাকা ডি ইয়ংয়ের দিকে। বিলবাওয়ের সবাই বার্সেলোনার ডান প্রান্ত নিয়েই ব্যতিব্যস্ত ছিলেন, ওদিকে গ্রিজমান যে অনেকটা আনমার্কড অবস্থায় বাঁ উইং থেকে ছুটে এসে পাকা গোল–শিকারির মতো স্ট্রাইকার পজিশনের চলে এসেছেন, কেউ দেখেননি। ডি ইয়ংয়ের পাসে পা ঠেকিয়ে গ্রিজমানই এগিয়ে দেন দলকে। পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে দেখা যায়, গোলে কোনো খামতি নেই।
তিন মিনিট পরে এবার ডি ইয়ং সহায়তাকারী থেকে একদম গোলদাতার ভূমিকায়। আলবার ক্রসে মাথা ঠেকিয়ে ৬৩ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন এই ডাচ মিডফিল্ডার। তবে সবার আলো কেড়ে নিয়েছেন মেসি নিজে, দলের তৃতীয় গোলটা করে। যেভাবে মাঝমাঠের ডান প্রান্ত থেকে ছুটে এসে ডি ইয়ংয়ের সঙ্গে ওয়ান-টু করে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত প্লেসমেন্টে গোল করলেন, সে গোল নিয়েই কয়েক হাজার শব্দের গুণকীর্তন করা যায় হয়তো! সিমোনের হাঁ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেসির জাদু দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না।
এই গোলের পর আর কারও মনোবল বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে? সিমোনেরও ছিল না। ৭২ মিনিটে লেফট উইংব্যাক আলবার ক্রসে পা ঠেকিয়ে দলকে আবারও এগিয়ে দেন মেসি। শটটা প্রায় আটকেই দিয়েছিলেন সিমোন, তাঁর হাতের ফাঁক গলে জালে জড়ায় বল। হয়তো ততক্ষণে মনোবল ভেঙে গিয়েছে দেখে সিমোন নিজেও অত বেশি চেষ্টা করেননি শটটা আটকানোর!
এই নিয়ে ৩১ বার কোপা দেল রে জেতা হয়ে গেল বার্সেলোনার। স্পেনের ইতিহাসে এত বেশি কোপা দেল রে জয়ের রেকর্ড আর কারও নেই, রিয়াল মাদ্রিদেরও না। ২০১৭–১৮ মৌসুমের পর এই প্রথম কোপা দেল রে জিতল বার্সেলোনা।
তবে সবচেয়ে বেশিবার কোপা জয়ের রেকর্ডটা না হলেও গত রাতে বার্সাকে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দিয়েছে মেসির গোল পাওয়া, ও নিজেদের ট্রফি–খরার সমাপ্তি। এখন যদি মেসি ক্লাবের পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট হয়ে নতুন চুক্তি সই করেন!