হাফিজের কিপটে বোলিংয়ে পাকিস্তানের জয়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:৫৭ পিএম, ১ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৪৩ পিএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা উঠেছে মোহাম্মদ হাফিজের হাতেই। ম্যাচে শেষে তিনি দারুণ উচ্ছ্বসিত ‘বোলার হিসেবে’ তাঁর প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটি হাতে নিয়ে। তা-তো তিনি হবেনই। হাফিজের কিপটেমির কারণেই যে ১৫৭ রান করেও ৭ রানের দারুণ এক জয় পেয়েছে পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজমের মুখেও তাই ম্যাচ শেষ থাকল কেবল হাফিজ-বন্দনাই।
প্রথমে ব্যাটিং করে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৭ রানের বেশি করতে পারেনি। খুবই গড়পড়তা সংগ্রহ। কিন্তু এমন স্কোরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে যেতে পারেনি। নাহ্! ব্যাটিং বিপর্যয় তাদের হয়নি। হাতে ৬ উইকেট নিয়েও ম্যাচটিতে ক্যারিবীয়রা ১৫০ রানের বেশি তুলতে পারেনি।
মোহাম্মদ হাফিজ পাকিস্তানের পক্ষে বোলিং ওপেন করেছিলেন। ৪ ওভার বোলিং করে ১ মেডেনসহ মাত্র ৬ রান খরচ করেছেন এই অফ ব্রেক বোলার। উইকেট নিয়েছেন ১টি। হাফিজের এই বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান তাড়ায় পিছিয়ে পড়ে শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত সেটিই কাল হয়েছে তাদের।
কিপটেমির রেকর্ডই ছুঁয়েছেন হাফিজ। ৪-১-৬-১ এমন বোলিং বিশ্লেষণে তিনি ছুঁয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গার রেকর্ড। টি-টোয়েন্টিতে আইসিসির শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে মালিঙ্গাই এত দিন কৃপণতার উদাহরণ হয়ে ছিলেন। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৬ রান দিয়েছিলেন তিনি। কাল হাফিজ তাঁর সঙ্গে ব্র্যাকেটবন্দী হলেন।
টসে হরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান ৩৬ বলে ৪৬ রানে করে ভালো শুরু এনে দেন তাদের। শারজিল খান করেন ১৬ বলে ২০। ৪৬ রানের ওপেনিং জুটির পর রিজওয়ান আর বাবর অজম মিলে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান। বাবর পান ফিফটি। ৪০ বলে ৪টি চার ও দুটি ছক্কায় ৫১ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের জাড়িজুড়ি শেষ এখানেই। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে তারা।
বাবর যখন ফেরেন তখন পাকিস্তানের সংগ্রহ ১৬.১ ওভারে ৩ উইকেট ১৩৪। সেখান থেকে বাকি ৭ জন মিলে পাকিস্তানের রানটাকে ১৫৭-এর বেশি নিতে পারেননি। মাঝে একবার বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ ছিল। সেই বৃষ্টি-বিরতিই কী শেষ অবধি কাল হলো পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের জন্য! ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে জেসন হোল্ডার ২৬ রানে নেন ৪ উইকেট। ডোয়াইন ব্রাভো ২৪ রানে নেন ২ উইকেট।
১৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই হাফিজের তোপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আন্দ্রে ফ্লেচারকে ফেরান পাকিস্তানি অফ ব্রেক বোলার। বোলিংয়ের শুরু করা হাফিজ পাওয়ার প্লেতে বোলিং করে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখেন। এ সময় ২০টিরও বেশি ডট বল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে। অথচ, ক্রিজে ছিলেন ক্রিস গেইল আর এভিন লুইসের মতো ব্যাটসম্যানরা।
এভিন লুইসই ৩৩ বলে ৩৫ করে পেশিতে টান পড়ায় মাঠ থেকে উঠে যান। শুরুতে গেইল, শিমরন হেটমায়ারদের ব্যর্থতা সামলানোর ভার কাঁধে তুলে নেন নিকোলাস পুরান। পাকিস্তানি পেসারদের ওপর খড়্গহস্ত হয়ে ৩৩ বলে খেলেন ৬২ রান। ৪টি চার ও ৬টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। কিন্তু বাকিদের কাছ থেকে সে ধরনের সাহায্য না পাওয়ায় তাঁর ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়নি পাকিস্তানের জন্য। কাইরন পোলার্ডের মতো ব্যাটসম্যানও ১৩ বলে করেন মাত্র ১৪। শেষ ৫ ওভারে ৭৪ রানের দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কাজটা এমন কঠিন করে দিয়েছিলেন হাফিজই।
ম্যাচ শেষে হাফিজের প্রশংসাই থাকল অধিনায়ক বাবর আজমের কণ্ঠে, ‘দলের পারফরম্যান্সের আমি খুবই খুশি। ব্যাটিংয়ের সময় আমরা ১৫-২০ রান কম করেছি। কিন্তু বোলাররা সেই ঘাটতিটা পুষিয়ে দিয়েছে। হাফিজ ভাই পাওয়ার-প্লেতে নিজের অভিজ্ঞতার পরিপূর্ণ ব্যবহার করেছেন। অধিনায়ক হিসেবে হাফিজ ভাইয়ের পারফরম্যান্স আমাকে দারুণ তৃপ্তি দিয়েছে।
হাফিজ জানিয়েছেন ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগিয়েছেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারে বোলার হিসেবে পাওয়া প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। আমি জানতাম এ কন্ডিশনে স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করাটা খুব কঠিন। ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগিয়েছি। আমি বোলিংটা যতটুকু জানি, পুরোটাই প্রয়োগ করতে চেয়েছি। এবং ভালো লাগছে যে সেটি আমি পেরেছি। আমি বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করে মজা পাই। তাদের চাপে ফেলেই ফলটা পেয়েছি।