জুন পর্যন্ত কোনও ভ্যাকসিন রফতানি নয় : ভারত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪২ এএম, ১ মে,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০০ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলংকাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন মৈত্রী কার্যক্রম আগামী জুলাই মাসের আগে আবারও শুরু করতে পারবে না ভারত। দেশটি ইতোমধ্যেই বাণিজ্যিক এবং বরাদ্দভিত্তিক ভ্যাকসিন ডোজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। যেসব প্রতিবেশী দেশ ইতোমধ্যেই দাম পরিশোধ করেছে সেগুলো পাঠানোও বন্ধ রাখা হয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে ভারতে করোনা মহামারির প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে ভারত। আগামী ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্কদের ভ্যাকসিন প্রদান উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে দেশটি। দেশের চাহিদা মেটাতে এপ্রিলের শুরুতে সর্বশেষ ভ্যাকসিনের চালান রফতানি করে ভারত। এরপরই আগে দাম পরিশোধ করা থাকলেও রফতানি বন্ধ রেখেছে দিল্লি।
আবারও কবে নাগাদ রফতানি শুরু হবে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ শ্রিংলা কোনও সময়সীমা জানাতে পারেননি। ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের কোনও অবনতি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশি, আর আমাদের সব সহযোগীরাই বুঝতে পারছে এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রয়োজন হলো টিকাদান কর্মসূচি বাড়ানো, দুই-তিনশ’ কোটি, সেকারণে আমাদের টিকাদান তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাড়াতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশি আর আমরা যা উৎপাদন করছি তা আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটানোর জন্য দরকার পড়বে।’
তবে সাউথ ব্লকের অন্তত দুই কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতের টিকা রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে প্রতিবেশীদের সমস্যার বিষয়ে সচেতন রয়েছেন তারা। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক চালান গত ২১ ফেব্রুয়ারির পর আর পাঠানো হয়নি। সেদিন ২০ লাখ ডোজ পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড টিকা পাঠানোর কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ছয় মাস ধরে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ ছয় মাসের মধ্যে সরবরাহ করার কথা। তবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে ভারত। এছাড়া উপহার হিসেবে দুই ধাপে পাঠিয়েছে আরও ৩২ লাখ। সবমিলে বাংলাদেশে আসা টিকার পরিমাণ ১ কোটি দুই লাখ ডোজ।
শ্রীলংকা এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড টিকার বাণিজ্যিক আদেশ দিয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লাখ ডোজ সরবরাহ করেছে ভারত। শ্রীলংকা ও নেপালে সর্বশেষ চালান পাঠানো হয় গত ৬ ও ২৮ মার্চ। তবে সেগুলো পাঠানো হয় কোভ্যাক্স জোটের আওতায়। আর এসব দেশে বাণিজ্যিক টিকা পাঠানো বন্ধ রয়েছে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে।
ফলে ভারতের টিকা সরবরাহের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে টিকাদান কর্মসূচি সম্পন্ন করার চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। দ্য হিন্দু বলছে, ভ্যাকসিন সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় বাংলাদেশ ও নেপাল সরকার ইতোমধ্যে তাদের উদ্বেগ আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিকে জানিয়েছে।
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে চীন দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে টিকা সরবরাহ করেছে। এছাড়া আরও পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে করোনা মোকাবিলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিষয়ক এক বহুপাক্ষিক আলোচনায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার সঙ্গে আলাপ করেছেন।
পাকিস্তান ইতোমধ্যে চীনের তিনটি ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ ও নেপাল বলেছে তারা আরও ভ্যাকসিন পাঠানোর আদেশ দেবে। শ্রীলংকা ইতোমধ্যে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের তিন লাখ ডোজ গ্রহণ করেছে। প্রবাসীদের প্রদান করতে দেশটি এই টিকা অনুমোদন করলেও নিজেদের নাগরিকদের জন্য তা অনুমোদন করা হয়নি। অন্যদিকে মালদ্বীপ ভারত ও চীন উভয়ের ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে। ব্যতিক্রম হিসেবে ভুটান সব টিকাই কোভ্যাক্সিন কর্মসূচির আওতায় ভারত থেকে সহায়তা হিসেবে নিচ্ছে।
ভারত সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বীকার করেন যে, ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, হয়তো অন্যদের জন্য সামান্য কিছু জায়গা তৈরি করা সম্ভব হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে ভারতীয় ভ্যাকসিন পাওয়া গেলে এসব দেশ চীনা ভ্যাকসিনের চেয়ে ভারতীয় ভ্যাকসিনকেই বেশি কার্যকর বিবেচনা করবে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর তা কেবল স্বল্প মেয়াদে নয়। বরং পাঁচ বছর ধরে ভারত যেন টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী এবং বিশ্বাসযোগ্য টিকা সরবরাহক থাকতে পারে তার চেষ্টা চলছে। ওই কর্মকর্তা জানান, ভারত আগামী দুই মাসের আগে টিকা সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারবে না।