আফগান নারী পুলিশকে অন্ধ করে দিল দুষ্কৃতকারী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৪৮ এএম, ১১ নভেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০২:১৬ পিএম, ২২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪
আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশের ৩৩ বছর বয়সী নারী পুলিশ কর্মকর্তা খায়েতারা তার কর্মস্থল থেকে বের হন। হঠাৎ তিন আরোহী মোটরসাইকেল নিয়ে ঝটিকা হামলা চালালে দুনিয়ার আলো নিভে যায় এই আফগান নারীর। হামলাকারীরা তাঁর দিকে গুলি ছুড়ে এবং চোখে ছুরিকাঘাত করে।
জ্ঞান ফিরে দেখেন হাসপাতালে। চারদিকটা অন্ধকার। চিকিৎসকদের কাছে জানতে পারেন, চোখে আঘাতের কারণে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু খায়েতেরা বুঝতে পারেন, তিনি আর কখনোই কিছু দেখতে পাবেন না।
মাস খানেক আগেই খায়েতেরা গজনি পুলিশের অপরাধ শাখায় যোগ দেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে খায়েতেরার স্বাধীনভাবে পেশাগত জীবন গড়ার স্বপ্নটাই ভেঙে গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম কমপক্ষে এক বছর পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। যদি হামলাটা তার পরে হতো, তাহলে দুঃখ কম পেতাম। মাত্র তিন মাস আমি পুলিশে চাকরি করতে পেরেছি।’
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, একজন নারীর পুলিশ কর্মকর্তা হওয়াটাই ছিল তালেবান জঙ্গিরা তার ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে।
এ হামলার পেছনে সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা খায়েতেরা। যদিও এমন হামলায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি। তবে খায়েতেরা ঘরে বাইরের কাজ তার বাবা পছন্দ না করতে না বলে জানায় তালেবান। আর এজন্যই তার বাবা হামলাকারীদের ভাড়া করেছিলেন।
চোখ অন্ধ করার বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টিরে এক কর্মী বলেন, আফগানিস্তানে নারীরা খুবই খারাপ সময় পার করছে। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে বলে মনে করেন তিনি। তালেবানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তির কারণে আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে হতে পারে বলেও জানান তিনি।
ছোটবেলা থেকে খায়েতেরার স্বপ্ন ছিল ঘরের বাইরে কাজ করার। স্বাবলম্বী হওয়ার। বাবাকে পাশে না পেলেও স্বামীর সমর্থন পান তিনি। খায়েতেরা বলেন, ‘আমি কাজে যাওয়ার সময় দেখতাম বাবা আমাকে অনুসরণ করছেন। তিনি তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আমাকে কাজ করতে বাধা দিতে বলেছিলেন তাঁদের।’
খায়েতেরা আরও বলেন, বাবা তাঁর পুলিশের পরিচয়পত্র তালেবানদের দিয়েছিলেন। যেদিন হামলা হয়, সেদিন বাবা তাঁকে কয়েকবার ফোন করেন। তাঁর অবস্থান কোথায়, তা জানার চেষ্টা করেন।
ভেবেছিলাম কমপক্ষে এক বছর পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। যদি হামলাটা তার পরে হতো, তাহলে দুঃখ কম পেতাম। মাত্র তিন মাস আমি পুলিশে চাকরি করতে পেরেছি।
গজনীর পুলিশের মুখপাত্র বলেন, তাঁরা মনে করেন হামলার জন্য তালেবান জঙ্গিরা দায়ী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খায়েতেরার বাবাকে নেয়া হয়েছে পুলিশ হেফাজতে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই খায়েতেরা’র। খায়েতেরা আশা করেন, বিদেশের কোনো দক্ষ চিকিৎসক তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারবেন।
সূত্রঃ রয়টার্স