মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে প্রথম মৃত্যু
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:২৮ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৭ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকালে গুলিতে আহত নারী মারা গেছেন।
আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
২০ বছর বয়সী ওই নারীর নাম মিয়া থতে থতে খাইং। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে এই প্রথম কোনো বিক্ষোভকারী মারা গেলেন।
৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিডোতে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভকালে আহত হন মিয়া থতে থতে খাইং। এদিন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান, রাবার বুলেট ও গুলি করে। মিয়া থতে থতে খাইংয়ের অবস্থা শুরু থেকেই গুরুতর ছিল। তিনি নেপিডোর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আজ স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালটি থেকে নিশ্চিত করা হয়, মিয়া থতে থতে খাইং মারা গেছেন। তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত হবে। একটি মেডিকেল বোর্ড এই পরীক্ষা করবে।
হাসপাতালটির এক চিকিৎসক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বিচার চাই। তার জন্য আমরা অগ্রসর হব।’
ওই চিকিৎসক জানান, মিয়া থতে থতে খাইংকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়ার পর থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন।
মিয়া থতে থতে খাইংয়ের ভাই ইয়ে হুতুত অং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি সত্যিই মর্মাহত। আমার কিছু বলার নেই।’
৯ ফেব্রুয়ারি মিয়া থতে থতে খাইংকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। এক্স-রেতে দেখা গেছে, এই আঘাত গুলির।
মিয়া থতে থতে খাইং চিকিৎসাধীন থাকাকালে পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্য হলো। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর ভাষ্য, মিয়া থতে থতে খাইংয়ের মাথায় যে আঘাত, তা দেখে মনে হয়েছে, তাঁকে সরাসরি গুলি চালানো হয়েছে।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে তারা সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের আটক-গ্রেপ্তার করে। এদিন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ করছেন দেশটির মানুষ। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বিক্ষোভ চলছে। সামরিক জান্তার কঠোর বিধিনিষেধ, দমন-পীড়ন সত্ত্বেও প্রতিদিন হাজারো মানুষ মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো, দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহর-নগরে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন। বিক্ষোভ দমাতে নিরাপত্তা বাহিনী ধরপাকড় চালাচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৫০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মিছিলে গুলি চালানোসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে জান্তা।
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তারা দেশটিতে গণতন্ত্র পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বলেছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের জান্তারা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে।