বাংলাদেশের ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে ভারত : জয়শঙ্কর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১৫ এএম, ৩০ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:৫৩ পিএম, ৩০ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
ভারত বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেশটির সরকারের।
গতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার অভিযোগ এনে লোকসভায় করা পাঁচটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে এ কথা বলেন এস জয়শঙ্কর।
জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশে চলতি বছরের আগস্টসহ বিভিন্ন সময়ে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর সহিংসতার খবর দেখেছে ভারত সরকার। তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ধর্মীয় স্থানগুলোতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ভারত। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
চলতি বছর শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় বাংলাদেশে বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ঢাকার তাঁতিবাজারে পূজামণ্ডপে হামলা এবং সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে চুরির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। এসব ঘটনার পর বিশেষ নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপন নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল।
জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন। সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের জীবন রক্ষা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব দেশটির সরকারের।
এদিকে, এদিন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে দিল্লিতে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ সাংবাদিকই বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং এক্ষেত্রে ক্ষেত্রে ভারত কী করছে জানতে চান।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হুমকি এবং হামলার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তভাবে সার্বক্ষণিক উত্থাপন করছে ভারত। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে সেটি তারা পালন করবে।
বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি এবং ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসকন বৈশ্বিকভাবে প্রখ্যাত সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তাদের সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার ভালো রেকর্ড রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আবারও বলব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, আমরা চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আমরা দেখেছি আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা আশা করি তার বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে সেটি স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হবে এবং তার যে আইনি অধিকার রয়েছে সেটি পুরোপুরিভাবে তিনি পাবেন।
উল্লেখ্য, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা হয়।
গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা ডিবি। এ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) তাকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হলে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে আদালত প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।