অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ছাত্রদল নেতার মানবেতর জীবনযাপন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:০৪ এএম, ২ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১৫ পিএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কৃতি সন্তান এক সময়ের ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটের তুখোড় ছাত্রদল নেতা মোঃ শফিউল আলম রানৈতিক প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রবাসে যাযাবর জীবন যাপন করছে। মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে পলিটেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটের আলোচিত এক শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় পুলিশী হয়রানীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সে কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শামছুল হকের পুত্র। আদালতে বিচারাধিন হত্যা মামলাটি গত ২৪ বছরেও নিস্পত্তি না হওয়ায় এবং অভিযুক্ত ও পলাতক আসামী শফিউল আলম দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে অস্ট্রেলিয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জানা যায়, ছাত্রদল নেতা শফিউল আলম বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তৎকালীন ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদ (বাকাছাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও ঢাকা পলিটেনিক্যালের ছাত্রদল নেতা মোঃ শফিউল আলম সরকারের মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে প্রবাসে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তৎকালীন ব্যাপক ভাবে আলোচিত সন্ত্রাসী কালা ফারুকের নেতৃত্বে পলিটেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউট এলাকায় পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড ঘটে। সেই সময় পরিটেকনিক্যালের জিয়াদুর রহমান ওরফে রিয়াদ নামে একজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী ছাত্রলীগের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্য নেতৃত্ব প্রদানকারী ছাত্রদল নেতাদের হত্যা মামলায় আসামী করা হয়। অন্যান্য ছাত্রদল নেতাদের সাথে দন্ডবিধির ৩০২/১১৪/৩৪ ধারায় মোঃ শফিউল আলমকেও হত্যা মামলার আসামী করা হয়। তখন থেকেই সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যায়। সেখান থেকে ২০০১ সালে সে বাংলাদেশে আসে।
পরে ২০০১ এর শেষের দিকে কোরিয়া চলে যায়। ২০০৯ সালের শেষের দিকে কোরিয়া থেকে দেশে আসেন। হত্যাকান্ডের পর পর পুলিশী হয়রানীর ভয়ে সে ভারতে পালিয়ে যায়। কোরিয়া থেকে দেশে এসে পুনরায় ২০১০ সালের ফেব্রয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। সে অস্ট্রেলিয়া থেকে দুই বছর পর আবার দেশে আসলে পুনরায় পুলিশী হয়রানীর শিকার হয়।
থানা পুলিশ তার গ্রামের বাড়ি ও ঢাকার বাড়িতে বার বার হানা দেয়। কোরিয়া থেকে ফিরে পুলিশের ভয়ে র্দীঘদিন পালিয়ে বেড়ানোর পর গত ৩ জানুয়ারি-২০২০ইং তারিখে পুনরায় অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। দেশে থাকাকালীন সময়ে ঢাকার কাফরুল থানা এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে সক্রিয়া ভাবে জড়িত ছিলো। দেশে থাকতে সে চরম ভাবে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাঁর আর্থিক সহায়তায় কাপাসিয়ার বাড়িগাঁও গ্রামের বাড়িতে ‘বায়তুল ফজর জামে মসজিদ’ নিমার্ণ করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার ব্যাপক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা সহ বিশিষ্ট সমাজসেবক হিসাবে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
পরিবার-পরিজন নিয়ে নেহায়েতই জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে বেঁচে থাকার আশায় সে পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে। সংঘাত কবলিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দারা মূলত নির্যাতন আর নিপীড়ন থেকে বাঁচার আশায় সে অস্ট্রেলিয়াতে মানবিক রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। অন্যান্য দেশের মতো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীর তালিকায় অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশীদের অবস্থান উপরের দিকে। বর্তমান এ অবস্থায় যথাযথ যৌক্তিক কারণ থাকলেও আইনি লড়াই করে একটু আশ্রয়ের আশায় দীর্ঘদিন যাবত যাযাবরের মতো দিনতিপাত করছে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ফিরলে জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে এই আশংকায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন ঢাকার মোঃ শফিউল আলম শফিক ।
অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী শফিউল আলম শফিক মোবাইল ফোনে বলেন, ‘‘আমি যখন ঢাকার পলিটেকনিক্যাল ইনষ্ট্রিটিউটে পড়তাম, তখন বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। ১৯৯৬ সালে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি প্রতিকুলে চলে যায়। ২৫ নভেম্বর সকালে পলিটেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউট হতে দক্ষিন বেগুনবাড়িস্থ পোষ্ট অফিস সংলগ্ন বটতলাস্থ শহিদ উল্লাহর খোলা চায়ের দোকানের সামনে একটি হত্যাকান্ড ঘটে। প্রকাশ্য দিবালোকে এলাকার চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কালা ফারুকের নেতৃত্বে বন্দুক দিয়ে গুলি করে জিয়াদুর রহমান ওরফে রিয়াদ (২১) নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যা করে।
তখন আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আলম লিটু বাদী হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও থানায় দন্ডবিধির ৩০২/১৪৪/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা (নং-৯৭) দায়ের করে। রাজনৈতিক ভাবে সেই সময় আমি শফিউল আলম বিরোধী দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতা। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তখন ওই হত্যা মামলায় ১১ জন নামধারী আসামীর সাথে আমাকেও জড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আমার নিজ এলাকা গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি।
ফলে তখন থেকেই আমি পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি এবং অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছি। বর্তমানে এমন অবস্থা হয়েছে যে, আমার এখন দেশে যাওয়া সম্ভব নয়। আমার রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই আমি অস্ট্রেলিয়াতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছি।” অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে অবস্থান করায় আর্থিক কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অবস্থায় এসব আবেদনের নিষ্পত্তিতে সময় কমানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন আবেদনকারী। বাংলাদেশে দমন-নির্যাতনের মুখে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার অভাবে গত পাঁচ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন এক লাখ ৩৭ হাজার বাংলাদেশী। বর্তমানে সে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন বলে তিনি জানান।