জাতিসংঘে পারমাণবিক চুক্তির নতুন খসড়া আটকে দিয়েছে রাশিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:০৬ পিএম, ২৯ আগস্ট,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫৮ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে জাতিসংঘ সম্মেলনে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়েছে রাশিয়া। পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে জাতিসংঘের একটি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি রয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছে বিশ্বের ১৯১টি দেশ। তারা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর চুক্তিটি পর্যালোচনা করে দেখে যে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে তা যথেষ্ট কিনা। কিন্তু এবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সম্মেলনে চুক্তি পর্যালোচনার পর নতুন যে খসড়া বয়ান তৈরি করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে রাশিয়া। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে জানানো হয়, এবারের পর্যালোচনায় ইউক্রেনের পরমাণু কেন্দ্র এবং জাপোরিঝিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রের আশপাশে চলা সামরিক তৎপরতা নিয়ে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মূলত সে কারণেই রাশিয়া এই ঘোষণাপত্র গৃহীত হতে দিচ্ছে না। শেষবার এই চুক্তি পর্যালোচনা করা হয় ২০১৫ সালে। সেবারও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো মতৈক্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তী পর্যালোচনা হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবছর নিউ ইয়র্কে।
১লা অগাস্ট থেকে শুরু হয়ে চার সপ্তাহ ধরে এই সম্মেলন চলার পর একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিনিধি দেশগুলো। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং বলেছেন মতৈক্যে পৌঁছতে এই ব্যর্থতায় তিনি গভীরভাবে আশাহত। তিনি বলেন, অন্য সব দেশ চুক্তির প্রস্তাবিত বয়ান গ্রহণ করতে রাজি হলেও রাশিয়া আপোষ করতে রাজি না হওয়ায় এ ব্যাপারে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বনি জেনকিন্সও বলেন, তার দেশ সম্মেলনের এই ফলাফলে গভীরভাবে দুঃখিত। বিশেষ করে যখন রাশিয়ার পদেক্ষেপের কারণেই আমরা এই সম্মেলনে বসেছি।
মূলত ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রসহ দেশটির বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর আশপাশে যে ধরনের সামরিক তৎপরতা চলছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই চুক্তিতে। আর এ নিয়েই আপত্তি রাশিয়ার। ইউক্রেনে যুদ্ধের গোড়ার দিকেই রাশিয়া জাপোরিঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রটির দখল গ্রহণ করে। চুক্তির খসড়ায় আরও মন্তব্য করা হয়েছে, এসব সামরিক তৎপরতার কারণে এই স্থাপনাগুলোর নিয়ন্ত্রণ দক্ষ ইউক্রেনিয় কর্তৃপক্ষের হাতছাড়া হয়ে গেছে, যার ফলে এগুলোর নিরাপত্তার ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ নিয়েই ক্ষুব্ধ রাশিয়া।
বৈঠকে রুশ প্রতিনিধি ইগর ভিশেনেভেৎস্কি বলেছেন খসড়ার চূড়ান্ত বয়ানে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে। কিছু অনুচ্ছেদ নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি দলের গুরুতর আপত্তি রয়েছে। কারণ সেগুলো খোলাখুলিভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। তিনি আরও বলেন, অন্য কিছু দেশও এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। এই চুক্তি গৃহীত হবার আগে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব দেশকে চূড়ান্ত দলিলটি অনুমোদন করতে হবে। সম্মেলনে মতৈক্য না হওয়ায় অনেক দেশ হতাশা প্রকাশ করলেও নেদারল্যান্ডস বলেছে তারা সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সন্তুষ্ট, তবে মতৈক্য না হওয়ায় খুবই হতাশ।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, চুক্তি নিয়ে মতৈক্য না হলেও এই প্রক্রিয়া সকলের জন্য নিরাপত্তা মেনে চলার বিষয়টি চর্চার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং এ ব্যাপারে বহুজাতিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ।