অর্পিতার বাড়ি থেকে আরো ২০ কোটি রুপি ও ৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৫১ এএম, ২৮ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:০৬ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখার্জির বাড়ি থেকে আরো ২০ কোটি রুপি নগদ অর্থ এবং পাঁচ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে।
প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে টাকা গণনা করার পর স্থানীয় সময় ভোর ৪টা নাগাদ এই টাকা গণনা শেষ হয় বলে জানা গেছে। তবে তদন্তকারী সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার হওয়া টাকা ও স্বর্ণের পরিমাণ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানায়নি। তদন্তকারী সংস্থা ইডির একটি সূত্রের বক্তব্য, ২০ কোটির আশেপাশে। যদিও ওই দাবির কোনো আনুষ্ঠানিক সত্যতা মেলেনি। বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন খবর আসছে। একটি সূত্রের যেমন দাবি, ২০ কোটি ছাড়িয়ে আরো কিছুদূর যেতে পারে ওই টাকার পরিমাণ। তবে ইডির তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না-দেয়া পর্যন্ত কোনো তথ্যই সমর্থনযোগ্য নয়।
স্তূপীকৃত টাকার সাথেই ওই ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে প্রচুর সোনার বাট ও অলঙ্কার। একটি সূত্রে দাবি, তিন কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। আবার অন্য একটি সূত্রের দাবি, পাঁচ কেজি। এ ক্ষেত্রেও বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ইডির তরফে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা ‘সিজার লিস্ট’ দেয়া হয়নি। যতক্ষণ না বিষয়টি তদন্তকারী সংস্থার তরফে সরকারিভাবে জানানো হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো অঙ্কই ‘সঠিক’ বলতে রাজি হচ্ছেন না কেউ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মীদের ডেকে এনে মোট চারটি বৃহদাকার যন্ত্রে চলছিল টাকা গোনা। কলকাতার একটি শাখা থেকে যন্ত্রগুলো বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে খবর। সাধারণত ওই যন্ত্র ব্যবহার হয় ‘কারেন্সি চেস্ট’-এ। ইডির একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে পাঁচটি সাধারণ যন্ত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকার পরিমাণ দেখে বড়মাপের যন্ত্র আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বুধবার দুপুরে বেলঘরিয়ার ওই ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে সেখানে ঢোকেন ইডির তদন্তকারী অফিসারেরা। সেখানেও টাকার পাহাড় দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেন বিশেষ যন্ত্র আনানোর। অর্পিতাকে জেরা করেই তারা ওই টাকার সন্ধান পান বলে সূত্রের বক্তব্য। ইডির এখটি সূত্রের এমনও বক্তব্য যে, অর্পিতা তাদের বলেছেন, তার বিভিন্ন ফ্ল্যাটকে নগদ টাকা গচ্ছিত রাখার জন্য ‘মিনি ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ শুরু হয় টাকা গণনা। যা শেষ হতে হতে শুক্রবার ভোর হয়ে যায়। নোটগণনার সাক্ষী হিসেবে একজনকে ওপরে নিয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তার আগেই ২০টি ট্রাঙ্কসহ একটি বড় ট্রাক নিয়ে আসা হয়েছিল ওই আবাসনে। ওই ট্রাঙ্কে ভরেই উদ্ধার-করা টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বেলঘরিয়ার ‘ক্লাব টাউন’ আবাসনে বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ পৌঁছয় ইডি। ওই আবাসনে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার। দু’টি ফ্ল্যাটের একটিতে টাকার সন্ধান পান তদন্তকারীরা। তল্লাশির পর অন্য ফ্ল্যাটটি ‘সিল’ করে দেয়া হয়। তার পর শুরু হয় অন্য ফ্ল্যাটে টাকা গোনা।
প্রথম রাউন্ডে গণনার পর ১৫ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। তার পরেও গণনা চলে। দ্বিতীয় রাউন্ডে তা পৌঁছয় ২০ কোটিতে। তার পরেও দীর্ঘ সময় তদন্তকারী অফিসার এবং ব্যাংকের কর্মীরা ওই ফ্ল্যাটটিতে ছিলেন। যা থেকে এলাকার মানুষ অনুমান করছেন, উদ্ধার-করা টাকার অঙ্ক ২০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভোরে টাকা গোনার কাজ শেষ হলেও ইডির তরফে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। টাকার সঠিক অঙ্কের কথাও জানানো হয়নি। ফলে বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে, তার একেবারে সঠিক হিসাব কেউই দিতে পারছেন না।
ইডি সূত্রের খবর, কোটি কোটি টাকার সাথেই ফ্ল্যাটে পাওয়া গিয়েছে প্রচুর সোনার বাট এবং অলঙ্কার। উদ্ধঝার হয়েছে রৌপ্যমুদ্রাও। সব মিলিয়ে যার বাজারমূল্য দু’কোটি রুপি হতে পারে। ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু দলিলও পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। তবে ইডির তরফে দলিল বা নথি নিয়েও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়নি। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অনুমান, আদালতে সেই নথি পেশ করার সময় বেলঘরিযা থেকে উদ্ধার-হওয়া নগদ টাকা এবং অলঙ্কারের হিসেব মিলবে। সে হিসেব মিলতে পারে সরকারি ‘সিজার লিস্ট’ থেকেও।
শুক্রবার টালিগঞ্জের একটি অআবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ২২ কোটি রুপি, সোনার গয়না এবং বিদেশী মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি। তার পর জানা যায়, বেলঘরিয়াতেও ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। বুধবার সেখানেই অভিযান চালায় ইডি।
তবে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের অভিযান বেলঘরিয়াতেই শেষ হয়ে যাবে কি না, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অর্পিতার বা পার্থর আরো কোনো সম্পত্তি রয়েছে কি না, অর্পিতার মালিকানাধীন বিনোদন সংস্থায় তল্লাশি চালালে সেখানেও এমন টাকা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই কৌতূহল ছড়িয়েছে। বুধবার বেলঘরিয়ার পশাপাশিই বালিগঞ্জ প্লেস এবং কসবার রাজডাঙা মেন রোডের দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর। কিন্তু তাতে কী আছে, তা নিয়ে তদন্তকারী সংস্থার তরফে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
এখন দেখার, ওই নথির ভিত্তিতে ইডি আরও কোথাও তল্লাশি অভিযান চালায় কি না। পার্থ এবং অর্পিতা— দু’জনেই ৩ অগস্ট পর্যন্ত ইডির হেফাজতে থাকবেন। তাদের জেরা করে আরো কোথাও এমনই নগদ টাকার হদিস পাওয়া যায় কি না, সেটাই দেখার।