বাইডেনের শপথ ঘিরে ওয়াশিংটনে নজিরবিহীন নিরাপত্তা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩১ এএম, ১৫ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৪৪ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ নেয়ার সময় যতো এগিয়ে আসছে রাজধানী ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা তত কঠোর করা হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় দেয়া হচ্ছে নিরাপত্তা বেষ্টনী আর একে একে বন্ধ হচ্ছে সড়ক ও সাবস্টেশনগুলো। আগামী সপ্তাহের শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে সহিংসতা ঠেকাতে রাস্তায় টহল শুরু করেছে ন্যাশনাল গার্ডের সশস্ত্র সেনা সদস্যরা। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে ক্যাপিটল ঘিরে ২০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় এই সংখ্যা ছিলো মাত্র আট হাজার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমবার সিনেটে অভিশংসন আটকে গেলেও গত সপ্তাহে ক্যাপিটলে তান্ডবে উস্কানির দায়ে এবার তা অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হলে ক্ষমতা ছাড়তে হবে তাকে। এমন অবস্থায় সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তান্ডবের পর ২৪ ঘণ্টা জুড়েই মোতায়েন থাকছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। দায়িত্ব পালনের পর অনেক সদস্যই বিশ্রাম নিতে সেখানেই খানিক ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। স্তূপাকারে জমা রাখা হয়েছে দাঙ্গা ঠেকানোর সরঞ্জাম আর গ্যাস মাস্ক। আবার ভবনের বাইরে সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিচ্ছেন অনেক সদস্য। গত শুক্রবার থেকে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা কংগ্রেস ভবনের বাইরে অবস্থান নিলেও ২০ জানুয়ারি শপথ অনুষ্ঠানের আগে আরও সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্তে।
শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলতে থাকার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আরও বিক্ষোভের প্রস্তুতির খবরের আলোকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি অবশ্যই সহিংসতা, আইন ভঙ্গ এবং যে কোনও ধরনের তান্ডব বন্ধ রাখতে হবে। এগুলোর জন্য আমরা দাঁড়াচ্ছি না আর এর জন্য আমেরিকাও দাঁড়াবেও না।’
ক্যাপিটল ভবন ঘিরে নতুন বেষ্টনী নির্মাণ এবং অন্য নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভবনটি ঘিরে সাত ফুট উঁচু বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। ধাতব বাধা নির্মাণের পাশাপাশি ক্যাপিটল ভবন সংশ্লিষ্ট এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। ক্যাপিটলের আশপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস জানিয়েছে, দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে ওয়াশিংটন মনুমেন্ট। মেয়র মুরিয়েল বাউসার দর্শনার্থীদের না আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাট এবং মার্কিন প্রতিনিধি হাকিম জেফরিস বলেন, ‘ক্যাপিটলে হামলা ছিলো সহিংস বিদ্রোহ যা আমেরিকানদের রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। আর সে কারণেই অস্বাভাবিক নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে মারা হয়েছে। হামলাকারীরা ন্যান্সি পেলোসিকে খুন করতে চেয়েছে, মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে চড়াতে চেয়েছে আর কংগ্রেস সদস্যদের খুঁজে বেড়িয়েছে। সেটাই বিদ্রোহ। সেটাই রাষ্ট্রদ্রোহ। সেটাই আইনহীনতা। সেটাই সন্ত্রাস।’
ওয়াশিংটন সাবওয়ে সিস্টেম জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩টি স্টেশন বন্ধ থাকবে। এছাড়া তিনটি ব্যস্তততম ডাউনটাউন স্টেশনও বন্ধ রাখা হবে। ক্যাপিটলে হামলার পর কিছু ট্রাম্প সমর্থক ফ্লাইটে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। আর সে কারণে নতুন করে এই ঘটনা এড়াতে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান স্টিভ ডিকসন গত বুধবার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ফ্লাইট বিঘ্নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে। শপথ অনুষ্ঠানের সপ্তাহে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে সব রিজার্ভেশন বাতিল করেছে বাড়ি ভাগাভাগির প্রতিষ্ঠান এয়ারবিএনবি এবং হোটেল টুনাইট। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন বিক্ষোভ সামাল দিতে অঙ্গরাজ্যগুলো প্রায়শই ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের ব্যবহার করেছে। তবে ক্যাপিটলের নিরাপত্তায় তাদের সশস্ত্র রাখার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে আরও সহিংসতার আশঙ্কাকে সামনে আনছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সেনা সদস্যদের সশস্ত্র রাখা জরুরি। আর তারা এখন পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জেফরি রোসেন আরও সহিংসতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। একই সঙ্গে শপথ অনুষ্ঠানের আগে সরকারি ভবন জোর করে দখলসহ সম্ভাব্য হামলা এবং হুমকির বিষয়ে তথ্য প্রদান করতে জনসাধারণকে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।