যুদ্ধের কারণে আসছে না নিউজপ্রিন্ট, সংকটে ভারতের সংবাদপত্র শিল্প
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:২২ এএম, ১০ এপ্রিল,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:০৭ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্রথমে করোনা মহামারি, এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সংকটে ভারতের সংবাদপত্র শিল্প। এভাবে চলতে থাকলে সংবাদপত্র প্রকাশনা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারতে ১৫২টি ভাষায় এক লাখের বেশি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ভারত সংবাদপত্র ও বই প্রকাশের জন্য মোট নিউজ প্রিন্ট আমদানির ৪৫ শতাংশেরও বেশি রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিউজপ্রিন্ট সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায়, কাগজ সংকটে পড়েছে বেশিরভাগ সংবাদপত্র। নানা কারণে রুশ সমুদ্রবন্দরে জাহাজ ভেড়াতে রাজি হচ্ছে না অধিকাংশ বিদেশি কার্গো জাহাজ। পাশাপশি সুইফট জটিলতায় নিউজপ্রিন্টের মূল্য পরিশোধ আটকে যাওয়ায় ভারতীয় কার্গো জাহাজগুলোতে রাশিয়ান নিউজপ্রিন্ট লোডিংও আটকে গেছে। দেশীয় নিউজপ্রিন্ট উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর এই সংকট সামাল দেয়ার সক্ষমতা নেই বলেই জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট, প্রেস কাউন্সিল ও এডিটরস অ্যাসোসিয়েশন শঙ্কা জানিয়েছে, এই সংকট আরও কিছুদিন চললে দেশব্যাপী বন্ধ হয়ে যেতে পারে একাধিক সংবাদপত্র। করোনা মহামারিতে কয়েক দশকের মধ্যে মারাত্মক সংকটের মুখে পড়ে ভারতের সংবাদপত্র শিল্প। ফলে মোদি সরকারের কাছে ইনসেনটিভ প্যাকেজের অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল। অভূতপূর্ব সংকটে ক্ষতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে ওই প্যাকেজের দাবি জানানো হচ্ছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউনে এক বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতের সংবাদপত্র শিল্প। ইন্ডিয়ান নিউজ পেপার সোসাইটি (আইএনএস) বলেছে, গত বছর মার্চ ও এপ্রিলে সংবাদপত্র শিল্প এরই মধ্যে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি রুপি লোকসান গুনেছে।
অর্থনৈতিক ব্যয় বরাদ্দ সংকুচিত হওয়ায় বছরের গুরুত্বপূর্ণ ওই মাসগুলোয় বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। আইএনএসের মতে, এমন অবস্থা ছয়-সাত মাস চললে এ শিল্পে লোকসান গিয়ে দাঁড়াবে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি রুপি। এ শিল্পকে বাঁচাতে মোদি সরকারের কাছে ইনসেনটিভ প্যাকেজের অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। মোদি সরকারকে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছে, সংবাদপত্রের ওপর তিন ধরনের বিপদ এসেছে। ভাইরাসজনিত কারণ, বিজ্ঞাপন ঠিকমতো না পাওয়া এবং নিউজপ্রিন্টের ওপরে থাকা শুল্কের বোঝা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় নেমে এসেছে যে, অনেক ছোটখাটো ও মাঝারি পত্রিকা তাদের প্রকাশনা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে গেলেও কমিয়ে দিয়েছে পৃষ্ঠার সংখ্যা।
আইএনএস আরও বলেছে, অর্থ সংকটে কর্মীদের বেতন ও সরবরাহকারীদের অর্থ দিতে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে সংবাদপত্রগুলোর। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ যুক্ত রয়েছেন। সংবাদপত্র সংগঠনটির দাবি, নিউজপ্রিন্টের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, অন্যান্য শিল্পে যেসব ছাড় ও সুবিধা দেয়া হচ্ছে সংবাদপত্রের জন্যও তা বিবেচনা করা। এছাড়াও যেসব সরকারি বিজ্ঞাপন এখনও বকেয়া, সেগুলো দ্রুত ছেড়ে দেয়ারও অনুরোধ করেছেন তারা। রাশিয়া বিশ্বব্যাপী নিউজপ্রিন্টের নেতৃস্থানীয় রফতানিকারক এবং এর বেশিরভাগ নিউজপ্রিন্ট তারা ভারতে রফতানি করে। ইউরোপে ইউরোপীয় প্রিন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল কমিউনিকেশন ফেডারেশন জানিয়েছে, গত ছয় মাসে কাগজের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ এবং নিউজপ্রিন্ট বেড়েছে ৮০ শতাংশ। দেশে ৫০ শতাংশেরও কম নিউজপ্রিন্ট উৎপন্ন হয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ ও করোনা মহামারির ফলে কন্টেইনার সংকটে নিউজপ্রিন্ট আমদানি প্রভাবিত হয়েছে। অন্যদিকে কম চাহিদা ও সরবরাহ, কাঁচামাল সংকট, সরঞ্জাম এবং ব্যাপক উৎপাদন খরচের কারণে দেশীয় উৎপাদনের বদলে সংবাদপত্র শিল্প বাধ্য হয়েই আমদানি করা নিউজপ্রিন্টের ওপর নির্ভরশীল।
ইন্ডিয়ান নিউজপেপার সোসাইটির সভাপতি মোহিত জৈন শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শিল্পের এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভারতের সংবাদপত্র শ্রীলঙ্কার মতো পরিণতি হতে পারে। দেশের নিউজপ্রিন্ট আমদানির ৪৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে এবং ৪০ শতাংশ কানাডা থেকে আসে। নিউজপ্রিন্ট উৎপাদনকারী মিলগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এই অভ্যন্তরীণ ঘাটতিতে প্রকাশকরা আমদানির করা নিউজপ্রিন্টের ওপর নির্ভরশীল হয়ে হয়ে থাকেন।