কয়েক বছরের সর্বোচ্চে খাদ্যপণ্যের দাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:১৫ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১১ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সেনা মোতায়েন ও হামলার আশঙ্কায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে থাকা রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দুই খাদ্যশস্য উৎপাদক দেশ। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার কারণে গম, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেল আমদানিকারকরা বিকল্প উৎস খুঁজছেন। এতে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে কয়েক বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি রয়টার্সকে এসব কথা জানিয়েছেন।
তথ্য বলছে, বৈশ্বিক গম রফতানির ২৯ শতাংশই আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এ ছাড়া, বৈশ্বিক ভুট্টা রফতানির ১৯ শতাংশ ও সূর্যমুখী তেল রফতানির ৮০ শতাংশই করে এ দুই দেশ। ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, যেকোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ খাদ্যশস্যের রফতানি প্রবাহকে ভয়াবহভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সংকটকালে সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষ্ণ সাগরীয় দেশগুলোর বিকল্প খুঁজে পেতে মরিয়া শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে গমের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ২ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া, ভুট্টার বাজারদর উঠেছে সাত মাসের সর্বোচ্চে। সয়াবিনের দামও স্থিতিশীল পর্যায়ে বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রধান এ তিন খাদ্যশস্যের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে। কিন্তু সে অনুপাতে উৎপাদন নেই। তার ওপর রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তুলেছে।
ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের কৃষি বাণিজ্যবিষয়ক অর্থনীতিবিদ ফিন জেলবেল বলেন, কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক প্রাপ্যতায়। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো সংকট এড়াতে অন্য রফতানিকারক দেশের শরণাপন্ন হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
পণ্যবাহী জাহাজের তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ বলছে, গত বছর রাশিয়ার গম রফতানির ৭০ শতাংশই গিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন সংকট চরম আকার ধারণ করায় এরই মধ্যে কিছু কিছু ক্রেতা সরবরাহকারী বদলেছেন। তাদের আশঙ্কা চলমান উদ্বেগ যদি সরাসরি যুদ্ধে রূপ নেয়, তবে চুক্তি অনুযায়ী খাদ্যশস্যের চালান যথাসময়ে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। জাহাজীকরণ প্রক্রিয়ায় যে ধীরগতি তৈরি হবে তা কাটতে অনেক সময় লেগে যাবে বলেও মনে করছেন তারা।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জানায়, বর্তমানে কার্গোগুলো যুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে কৃষ্ণ সাগরমুখো হচ্ছে না। এ কারণে এখন থেকে সরবরাহ ব্যাহত হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল থেকে সরবরাহ কমার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার গম ও ভুট্টার চাহিদা বাড়ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানায়, এরই মধ্যে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্য এক দশকের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। গম ও শুকনো পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা দাম বাড়াচ্ছে। এরই মধ্যে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা খাদ্যপণ্যের বাজারকে স্মরণকালের ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ফেলতে পারে। জানুয়ারিতে এফএওর ফুড প্রাইস ইনডেক্সে খাদ্যপণ্যের গড় বৈশ্বিক মূল্যসূচক ছিল ১৩৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট, যা ডিসেম্বরের চেয়ে ১ দশমিক ৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে চিনিজাত পণ্যের বৈশ্বিক দাম কমলেও বেড়েছে উদ্ভিজ্জ তেল ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম। এ সময় খাদ্যশস্য ও মাংসের দাম আগের মাসের তুলনায় প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।