কানাডায় টিকাবিরোধী বিক্ষোভ, অটোয়া পুলিশপ্রধানের পদত্যাগ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:৪৫ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২৩ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কানাডার অটোয়াতে করোনাবিধির বিরুদ্ধে ট্রাকচালকদের চলমান বিক্ষোভ সামলাতে ব্যর্থতার জন্য কয়েক দিন ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছিলেন শহরটির পুলিশপ্রধান পিটার স্লোলি। সমালোচনার মুখে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। টুইটারে পিটারের পোস্ট করা বিবৃতির বরাতে আল–জাজিরা এসব তথ্য জানিয়েছে।
টুইটার পোস্টে পিটার স্লোলি লিখেছেন, ‘বিক্ষোভের শুরু থেকেই এ শহরকে নিরাপদ রাখতে এবং নজিরবিহীন ও অপ্রত্যাশিত এ ঘটনার অবসানে আমি সাধ্যমতো সবকিছু করেছি।’ তিনি জানান, বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে শহরকে দখলমুক্ত করতে অটোয়ার পুলিশ বাহিনীতে নতুন নতুন সরঞ্জাম যুক্ত হয়েছে।
পিটার বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এ অবরুদ্ধ অবস্থার অবসানে অটোয়া পুলিশ বিভাগ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সক্ষম।’
কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে ট্রাক চালানোর ক্ষেত্রে করোনার টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করায় সম্প্রতি এর বিরোধিতা করে ‘ফ্রিডম কনভয়’ বিক্ষোভ শুরু হয়। কানাডার ট্রাকচালক ও তাঁদের সমর্থকেরা গাড়িবহর নিয়ে অটোয়ার রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাও অবরুদ্ধ করেন তাঁরা।
আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলোয় গাড়ি থামিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভকারীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন এবং রাতভর আতশবাজির বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ কেন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পারছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
পিটার স্লোলি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশ দিয়ে এ বিক্ষোভের সমাধান করা যাবে না। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কানাডার সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেন। পরে পিটার স্লোলি এ বিক্ষোভকে ‘অবরোধ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। নিরাপত্তা জোরদারেরও আহ্বান জানান তিনি।
গত সোমবার বিক্ষোভ ঠেকাতে কেন্দ্রীয় জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করেন ট্রুডো। দেশজুড়ে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে সমর্থন দিতে এবং এবং তাদের শক্তি বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি। জরুরি আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে ‘সাময়িকভাবে বিশেষ পদক্ষেপ’ নেওয়ার সুযোগ পায় কেন্দ্রীয় সরকার।
আন্দোলনরত ট্রাকচালকেরা কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ব্যস্ততম সীমান্তক্রসিংও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সীমান্তক্রসিংটি অ্যাম্বাসেডর ব্রিজ নামে পরিচিত। সেটি কানাডার অন্টারিও প্রদেশের উইন্ডসোর ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কয়েক দিন ধরে অবরুদ্ধ থাকার পর কানাডা কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
তবে অটোয়াতে কিছুসংখ্যক ট্রাকচালক ট্রুডোর জারি করা জরুরি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে এখনো তাঁদের অবস্থানে অটল।
উল্লেখ্য, কানাডার সরকার গত ১৫ জানুয়ারি আন্তসীমান্ত ট্রাকচালকদের জন্য করোনার টিকাসংক্রান্ত আদেশ জারি করে। এর আওতায় কানাডার যে ট্রাকচালকেরা টিকা নেননি, তাঁদের ট্রাক নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে ফেরার পর প্রতিবারই কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বিদেশি ট্রাকচালকদের টিকা গ্রহণ নিয়ে বাধ্যবাধকতা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রও।