ট্রাম্পের অডিও কল ফাঁস, ভোট খুঁজে বের করতে বললেন কর্মকর্তাকে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:২১ পিএম, ৪ জানুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৫৪ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি শেষ হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তাকে ভোট খুঁজে বের করতে বলেছেন। নির্দেশ না মানলে অনেক ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন বলেও সেই কর্মকর্তাকে হুমকি দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত ট্রাম্পের ফোন কলের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। যেখানে এসব কথা তাকে বলতে শোনা যায়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (২ জানুয়ারি) জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ফোন করেন। তাঁদের দীর্ঘ ফোনালাপের অডিও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট গতকাল রোববার প্রথম প্রকাশ করলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল পাল্টানোর জন্য আর কত নিচে নামবেন, আর কত–কী করবেন, এ নিয়ে মার্কিন মিডিয়া সরগরম হয়ে উঠেছে। তাঁকে বন্ধ করার জন্যও কেউ এগিয়ে আসছে না।
ফোনালাপের সূত্র ধরে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেক্রেটারি অব স্টেটকে ১১ হাজারের বেশি ভোট কোনোভাবে খুঁজে বের করার জন্য বারবার বলছেন বলে ফোনালাপে শোনা যায়।
ট্রাম্প বলছিলেন, ‘আমি এই একটা জিনিসই চাইছি—কোনোভাবে ১১ হাজার ৭৮০ ভোট খুঁজে বের করা।’ ট্রাম্পের এই চাওয়ার কারণ, তাহলে জো বাইডেনের চেয়ে এক ভোট বেশি হয়ে যাবে এবং জর্জিয়ার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন, তা প্রমাণিত হবে। এমনিতেই নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের কথার পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে বলতে শোনা যায়, তিনি (ট্রাম্প) ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কথা বলছেন। রাজ্যের ভোট ঠিকই একাধিকবার গণনা করা হয়েছে। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় নতুন ভোট খুঁজে পাওয়ার কাজ যে তিনি করবেন না, এমন কথা বিনয়ের সঙ্গে বলেন ব্র্যাড রাফেনসপারজার।
রিপাবলিকান পার্টির লোকজন ব্র্যাড রাফেনসপারজারের ওপর অসন্তুষ্ট বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন ফোনালাপে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এমন ব্যবহার রিপাবলিকানরা নাকি মেনে নিতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারি জর্জিয়ায় দুই সিনেট নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন। এখন যদি তাঁর কথামতো সব ঠিক করে নেওয়া হয়, রিপাবলিকান পার্টির নেতারা সেক্রেটারি অব স্টেটকে ‘খুবই শ্রদ্ধা’ করবেন বলে ট্রাম্প বলতে থাকেন।
বেপরোয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে পরাজয় মানেননি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো জাতীয় নির্বাচনের পর যেমন সব কাণ্ড ঘটেনি, তা–ই ঘটিয়েছে তিনি। একের পর এক মামলা করেছেন। অর্ধশতাধিক মামলার একটাও কেউ আমলে নেয়নি। সুপ্রিম কোর্টও ট্রাম্পের নির্বাচনে কারচুপির ভুয়া দাবি শুনানিতেই রাজি হননি। এখন ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেক্টোরাল ভোট গণনা নিয়ে আপত্তি ওঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। নিজের সমর্থক আইনপ্রণেতাদের চাপ দিচ্ছেন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ফোনালাপের অডিও এমন একটি প্রমাণ, যার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে অধস্তন রাজ্য কর্মচারীদের ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এর আগে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ব্রায়ান কেম্পকে এমন চাপ দিয়েছেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রথমে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তাঁর প্রশংসায় নানা কথা বলেন। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার জন্য বলেন। এতেও কাজ না হলে অপরাধের ভুয়া অভিযোগে ফাঁসানোর হুমকি দেন। একপর্যায়ে ট্রাম্প বলে বসেন, ব্র্যাড রাফেনসপারজার খুব বড় ঝুঁকি নিচ্ছেন।
রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর এবং সেক্রেটারি অব স্টেট—দুজনই রিপাবলিকান। তাঁরা প্রেসিডেন্টের সরাসরি চাপ সত্ত্বেও নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াননি। একই কাজ করেছেন পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনাসহ বেশ কিছু রাজ্যের কর্মকর্তারা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ, হুমকি ও প্রলোভনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যপর্যায়ের এসব কর্মকর্তা।
গতকাল ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এক টুইটবার্তা দেওয়া হয়। সেখানে ব্র্যাড রাফেনসপারজারর সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি জানান ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্পের ভাষ্য, ব্র্যাড রাফেনসপারজার নির্বাচনসংক্রান্ত জালিয়াতি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।