ভারতের মুসলিমপ্রধান লাক্ষাদ্বীপের স্কুলে বাতিল হলো শুক্রবার ছুটি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৩৭ এএম, ২২ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৪ পিএম, ৩১ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে কাশ্মির ছাড়া একমাত্র মুসলিমপ্রধান এলাকা লাক্ষাদ্বীপে স্কুলগুলোতে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির বিধান বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বীপটিতে প্রচলিত কয়েক দশকের বিধান বাতিল করা হলো। লাক্ষাদ্বীপ শিক্ষা বিভাগ একটি নতুন ক্যালেন্ডার বানিয়েছে যেখানে দ্বীপের সমস্ত স্কুলে শুক্রবার ওয়ার্কিং ডে আর রবিবার ছুটির দিনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জুমার নামাজের কারণে মুসলিমদের কাছে শুক্রবার বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ায় এতদিন মুসলিম অধ্যুষিত এই দ্বীপপুঞ্জের স্কুলগুলোতে শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। শুক্রবারের এই ছুটি বাতিল হওয়ার পর লাক্ষাদ্বীপের সংসদ সদস্য মোহম্মদ ফইজল বলেছেন, ছয় দশক আগে যখন সার্বিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে এখানে স্কুল খোলা হয়েছিল, তখন থেকে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার আর শনিবার অর্ধদিবস খোলা থাকে। তবে নতুন এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে স্কুলসংশ্লিষ্ট কেউ, জেলা পঞ্চায়েত বা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, এমন সিদ্ধান্ত জনতার অধিকারের বিরুদ্ধে, এটা প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্ত। যখন কোনো স্থানীয় ব্যবস্থায় এমন বদল আসে, তখন মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। এসব অভিযোগের বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, প্রশাসন সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ধরে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন লাক্ষাদ্বীপ জেলা পঞ্চায়েতের সহ-সভাপতি ও কাউন্সিলর পি পি আব্বাস। লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক প্রফুল খোডা প্যাটেলের কাছে একটি চিঠি লিখে তিনি এ দাবি জানিয়েছেন।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, জাতিগতভাবে লাক্ষাদ্বীপের মানুষ মুসলিম আর তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী শুক্রবার হলো পবিত্র দিন এবং জুমার নামাজ অবশ্যই পড়তে হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মোড়া লাক্ষাদ্বীপের জনসংখ্যার প্রায় ৯৮ শতাংশই মুসলিম আরব সাগরের বুকে ৩৬টি কোরাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই লাক্ষাদ্বীপ। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিযুক্ত একজন প্রশাসকই এখানে সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্মের তদারকি করে থাকেন। বর্তমানে সেখানে প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক বিজেপি নেতা প্রফুল খোডা প্যাটেল। এই প্রফুলকে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলেই মনে করা হয়। সাধারণত খুব সিনিয়র আমলা বা আইপিএস অফিসাররাই এই দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। সেখানে প্রফুল খোডার এ দায়িত্বে আসাটা দৃশ্যত ধারার ব্যতিক্রম। প্রফুল খোডা লাক্ষাদ্বীপের দায়িত্বে আসার পর এর আগেও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেখানে। এর মধ্যে রয়েছে-
০ লাক্ষাদ্বীপে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব
০ বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে অ্যালকোহল বৈধ করা
০ যাদের দুটির বেশি সন্তান আছে, তাদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়ার অধিকার না দেয়া
০ স্কুলে মিড-ডে মিলে শুধু নিরামিষ খাবার দেয়ার প্রস্তাব
০ উন্নয়নের নামে লাক্ষাদ্বীপ প্রশাসন ব্যক্তি মালিকানার যেকোনো জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস ও বিবিসি।