শহরের অর্ধেক পরিবারই দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে : বিশ্বব্যাংক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:০৫ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:২১ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
শহরের অর্ধেক পরিবারই দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। আর শহরের আট শতাংশ দরিদ্র মানুষ, কোনো ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সুবিধা পান না।
আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রটেকশন পাবলিক এক্সপেনডিচার রিভিউ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ বাংলাদেশে দারিদ্র্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। এই সুরক্ষা কর্মসূচি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নীতির কেন্দ্রে রয়েছে এবং ক্রমাগত দরিদ্র পরিবারের উপকার করছে। সুরক্ষা কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা যথাযথভাবে গ্রহণ করা হলে এবং তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৩৬ শতাংশ ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো মূলত গ্রামাঞ্চলকেন্দ্রিক। তবে শহুরে জনসংখ্যার ৫ জনের মধ্যে ১ জন দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে এবং শহরের অর্ধেক পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গ্রামীণ এবং শহর এলাকায় সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো পুনর্বিন্যাসের তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরে ১৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকলেও তাদের মধ্যে ১১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় রয়েছে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে ২৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকলেও সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আছে ৩৬ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ গ্রামে দারিদ্র্য হারের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।
একটি স্বচ্ছ জরিপ করে ‘ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডেটাবেস’ তৈরির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রকৃত উপকারভোগীর তালিকা করতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনটিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অব্যাহত বিনিয়োগ এবং প্রকল্প পরিকল্পনা, নকশা ও বিভিন্ন কর্মসূচির ভাতা বিতরণসহ বিদ্যমান কাঠামো কীভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের অপারেশন ম্যানেজার ডানডান চেন বলেন, গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে চলেছে। এখন এটি দেশের প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে তিনটিতে পৌঁছেছে। কোভিড-১৯ মহামারি আরো জোরদার, দক্ষ এবং অভিযোজিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাকে জোরালো করেছে। যথাযথ লক্ষ্য ঠিক করে এই কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার কমাতে সফল হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ দশমিক ৬ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা বা সুরক্ষা কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে; যা এই ধরনের আয়ের দেশগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে কিছু ঝুঁকি-গোষ্ঠী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই কর্মসূচিগুলোতে দরিদ্র তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি আট জন দরিদ্র ব্যক্তির মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এরপরেও, দরিদ্র শিশুরা সামাজিক সুরক্ষা ব্যয়ের মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ পায়। এই ব্যয় আরো কার্যকর হবে, যদি বরাদ্দগুলো বিভিন্ন স্তরের দরিদ্রদের মাঝে ভাগ করে দেয়া যায় এবং সেভাবেই কর্মসূচিগুলো হাতে নিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালাইন কদুয়েল বলেন, শৈশবে বিনিয়োগ একটি শিশুকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে এবং প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে আরো উৎপাদনশীল হতে সাহায্য করে। এভাবে প্রজন্ম ধরে দারিদ্র্যের চক্র ভেঙে দেয়া সম্ভব। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই কর্মসূচি নিতে হবে।
সুবিধাভোগীরা যাতে সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা দ্রুত পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিতের পরামর্শ রয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাড়াতে হবে। সরকারের কোষাগার থেকে তহবিল সুবিধাভোগীর কাছে স্থানান্তরে প্রায় দুই মাস সময় লাগে, জিটুপি পদ্ধতিতে এটি ১০ দিনে নামিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, তখন দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে অনুমিত হিসাবে তা নেমে আসে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। এর পর দারিদ্র্যের হার নিয়ে আর কোনো নতুন তথ্য প্রকাশ করেনি বিবিএস। তবে গত ২৩ জুন ‘দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণা তথ্য প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) বলেছে, ‘করোনাভাইরাস মহামারির অর্থনৈতিক প্রতিঘাতে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে।
তার আগে ১০ জুন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছিল, ‘করোনার কারণে আয় কমে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সিপিডি, সানেমসহ অন্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর দারিদ্র্যের হার নিয়ে দেয়া তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।