তালেবান সরকারে কে কোন পদে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:০৮ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩১ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর পরপরই তারা ঘোষণা দেয় যে, তাদের সরকার গণতান্ত্রিক হবে না; চলবে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী। প্রায় তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ ঘোষণা করার পর অন্তর্র্বতী সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান সরকারে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় আছেন বা যার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা: নতুন তালেবান সরকারে হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা আছেন শীর্ষ নেতা হিসেবে। ২০১৬ সালের মে মাসে তালেবানের ‘সর্বোচ্চ নেতা’ হিসেবে নির্বাচিত হন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তিনি তালেবান ঘোষিত তথাকথিত ‘ইসলামিক আমিরাতে’র শীর্ষ নেতা। আশির দশকে তিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে সামরিক কমান্ডারের তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবেই তার পরিচিতি বেশি। নব্বইয়ের দশকে শরিয়া আদালতের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন আখুন্দজাদা। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তালেবান তাদের মতো করে ধর্মীয় আইনকানুন চালু করে। সেই সময় হত্যাকারী ও ব্যভিচারীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো এবং চোরদের হাত কেটে ফেলা হতো। তখনকার তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের (ধারণা করা হয় তিনি ২০১৩ সালে মারা গেছেন) নেতৃত্বে তালেবান টেলিভিশন, সংগীত, চলচ্চিত্র নারীদের মেকআপ বা রূপসজ্জার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ১০ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়াও তারা নিষিদ্ধ করেছিল। হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর বলে ধারণা করা হয়। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তিনি রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় - সব বিষয়ের শীর্ষ নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ: তালেবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। ১৯৯৪ সালে যে চারজন মিলে আফগানিস্তানে তালেবান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মোল্লাহ মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ তাদের একজন। তিনি সবচেয়ে বেশিদিন ধরে তালেবানের নেতাদের কাউন্সিল বা রেহবারি শুরার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম দফার দায়িত্ব পালনের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময়ে তালেবান সরকারে দায়িত্ব পালন করার কারণে তার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সিরাজুদ্দিন হাক্কানি: নতুন তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে রয়েছেন সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। তিনি মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন। পিতা জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যুর পর তিনি হাক্কানি নেটওয়ার্কের নতুন নেতা হন। আফগানিস্তানে আফগান বাহিনী এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু হামলার জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
ধারণা করা হয়, তার বয়স ৪৫ বছর। হাক্কানি নেটওয়ার্ক হচ্ছে ওই এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভীতিকর জঙ্গি গ্রুপ। অনেকে মনে করেন, আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের চেয়ে তারা বেশি প্রভাবশালী। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় থাকা এই গ্রুপ আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের তত্ত্বাবধান করে থাকে। দোহার শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে নিউইয়র্ক পোস্টে ছাপা হওয়া একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে সিরাজুদ্দিন হাক্কানি লিখেছেন, ‘চার দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন অমূল্য আফগান জীবন ঝরে যাচ্ছে। প্রত্যেকে এমন কাউকে হারিয়েছে যাকে তারা ভালোবাসতেন। যুদ্ধে সবাই ক্লান্ত। আমি উপলব্ধি করতে পারছি, পরস্পরকে হত্যা বা আহত করা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
আবদুল গনি বারাদার: সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আছেন আবদুল গনি বারাদার। তিনি তালেবানের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অভিযানে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি তাদের একজন প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হন। তবে ২০১০ সালে একটি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান যৌথ অভিযানে তিনি করাচি থেকে গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী আট বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দী থাকেন। দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে কাতারের দোহায় চালু করা তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কোন তালেবান নেতা হিসাবে ২০২০ সালে প্রথম বারাদার যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তার ঠিক আগে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের দোহা চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বারাদার। তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেবার পর ধারণা করা হয়েছিল তিনি নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দেখা গেল তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বারাদার ছাড়াও এ অন্তর্র্বতী সরকারে আরও একজন উপ-প্রধানমন্ত্রী আছেন। তিনি হচ্ছেন মৌলভি আবদুল সালাম হানাফি।
মোহাম্মদ ইয়াকুব: নতুন তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে আছেন মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব। তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমরের সন্তান।
ধারণা করা হয়, তার বয়স ৩০ বছরের কিছু বেশি। তিনি বর্তমানে দলের সামরিক শাখার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, তালেবান যখন পুরো আফগানিস্তান জুড়ে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিল, ইয়াকুব তালেবান যোদ্ধাদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা আফগান সামরিক বাহিনী বা সরকারের কর্মকর্তাদের কোন ক্ষতি না করে। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘর লুটতরাজ করা না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তালেবানের অন্তর্র্বতী সরকারে আরও যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আছেন মৌলভী আমির খান মুত্তাকি; অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন মোল্লাহ হিদায়াত বদ্রী, বিচারমন্ত্রী হিসেবে আছেন আবদুল হাকিম ইশাকজী ও তথ্যমন্ত্রী হয়েছেন খাইরুল্লাহ সাইদউয়ালি খয়েরখা। নতুন তালেবান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন মওলাউই নূরউল্লাহ মুনির। সরকারে কোনো নারীর অংশগ্রহণ নেই। তবে আগের দফার ক্ষমতায় থাকাকালে নারীদের প্রতি তাদের যে কঠোর মনোভাব ছিল, এবার তার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন ও গণমাধ্যমে নারীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ ছাড়া নারীরা যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন, সে কাজ চালিয়ে যেতেও বলেছে তারা।