আফগানিস্তানের চার দশক-তিন সংকট মিটছে না পরাশক্তিরা নেপথ্যে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:২০ এএম, ১ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৯ পিএম, ২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৫
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আফগান শরণার্থীদের গ্রহণে অনেক দেশ দ্বিধান্বিত। এমনকি নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও তাদের সীমান্তে কড়াকড়ি করেছে। যদিও নিজ জন্মভূমি ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে উদগ্রীব অনেক আফগান। বিষয়টি তালেবান যোদ্ধাদের যে ভাবাচ্ছে না তাও নয়। বিভিন্ন জাতি ও ভাষার এই দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্নতা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বোমা, রক্তপাত, বিদ্বেষ, বিরোধী মতের মিল-অমিল ইত্যাদি রয়েছে এই ভূমিবদ্ধ (ল্যান্ড-ব্লকড) দেশটিতে। সেন্টার ফর গভর্নেস (সিজিএম)-এর ডিস্টিংগুইসড ফেলো ড. সিনহা এমএ সাঈদের মতে, সমস্যাটি জটিল। মার্কিনীরা চলে যাওয়ার পর আফগান সমস্যা আরো জটিল হয়ে গেছে। কবি ড. মাহবুব হাসানের মতে, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখছে পৃথিবীর পরাশক্তিরা। বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক-প্রকাশক সাবেক সেনা অফিসার আবু রুশদ-এর মতে, ১৯৪৭ সাল থেকেই আফগানিস্তান জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। এখন যে শরীয়া আইনের কথা বলা হচ্ছে তার পরেও সেখানে শান্তির আশা নেই। শরীয়া আইন তো সৌদি আরবেও রয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কাশেমের মতে, আফগানিস্তানে শান্তি আসবে বলে আশা করছি। কারণ সেখানে মুসলিমদের সংখ্যাই তো সর্বাধিক।
আফগানে বাংলাদেশি স্টাইলে সরকার!
বাংলাদেশে দীর্ঘ এক দশক স্বৈরশাসনের পর ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে। এটি সম্ভব হয়েছিল সর্বদলীয় আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। সর্বদলীয় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। বিশেষ করে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও সিপিবির ছাত্র সংগঠকরা গঠন করেছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এই তিনটি দলের ছাত্র নেতাদের গলায় গলায় ভাব গড়ে উঠেছিল। তাদের একই সঙ্গে চলাফেরা করতে দেখেছি। শহীদ জেহাদের লাশ ছুঁয়ে স্বৈরাচারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর পক্ষে তারা অবিচল হয়েছিল। জেহাদের লাশ ছুঁয়ে তখন দুই নেত্রী (বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা) স্বৈরাচারের পতনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্রদের আন্দোলন চাঙ্গা রাখতে। এক সময় একটি দলীয় স্লোগান (জয় বাংলা) দেয়া নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিভক্তির সৃষ্টি হলেও তা শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল- যা এখনো স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ১৯৯১ নির্দলীয় এবং তত্ত্বাবধায়ক (১৯৯৬ ও ২০০১) সরকারের অধীনে ৩টি সুষ্ঠু নির্বাচন এখনো অনুকরণীয় হয়ে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ারই একটি রাষ্ট্র আফগানিস্তানের বর্তমান সংকট নিরসনে এই ধরনের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা উঠেছে। বাংলাদেশে পরবর্তী সংসদ (দ্বাদশ) নির্বাচন কেমন সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে যখন আলাপ-আলোচনা চলছে, তখন বাংলাদেশের উদ্ভাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বটে। কারণ বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ওই তত্ত্বাধায়ক সরকারের নির্বাচনের বিষয়টি উৎখাত বর্তমান সরকারের সময়েই করা হয়েছে, যা অর্জন করতে ১৭৩ দিন হরতাল করা হয়েছিল!
খনিজ সম্পদও একটি বিষয়- ড. মাহবুব হাসান : কবি-কলামিস্ট ড. মাহবুব হাসান ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এবারের আফগান সংকট নিয়ে তিনি একাধারে পত্রিকায় কলাম লিখছেন ও স্যাটেলাইট টিভিতে বক্তব্য রাখছেন। তিনি সরাসরি বলছেন, পরাশক্তিদের দৃষ্টি আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের দিকে। আমেরিকান কোম্পানি ইউনোকল সরাসরি বলেছে, তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা পাওয়া যাবে তালেবানের কাছ থেকে। খনিজ উত্তোলনে ইউনোকল যে কথা বলছে, এর পেছনে আছে আমেরিকান প্রশাসনেরই ইঙ্গিত। ওই প্রশাসন ডোনাল্ড ট্রাম্প হোক বা হোক জো বাইডেনের। অন্য শক্তিগুলো যে বাঘের মতো ছপ্পন ধরে আছে, তা বলাই বাহুল্য।
কেউ কাউকে মানে না- আবু রুশদ : আবু রুশদ সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেয়ার আগে সেনা অফিসার ছিলেন। এখন বাংলাদেশের প্রথম প্রতিরক্ষাবিষয়ক (ডিফেন্স জার্নাল) একটি সাময়িকী নিয়মিত বের করেন। তার পিতা (মাযহারুল হান্নান) কারমাইকেল কলেজে শিক্ষকতা করতেন। সম্প্রতি মোবাইল ফোনে আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে তার বিশ্লেষণ জানতে চাইলে তিনি দিনকালকে জানান যে, আফগানরা এখনও বহু মত, বহু দলে বিভক্ত। কেউ কাউকে মানে না। পাঠান-পাস্তুন-তাজাকস্তান কেউ কারো চেয়ে কম নয়। আর আছে উজবেকিস্তান। আফগানরা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। পাকিস্তানেই এরা আছে ৩০ লাখ। এখন অবশ্য নতুন করে আফগানদের পাকিস্তান প্রবেশে কড়াকড়ি করা শুরু হয়েছে। এবার কি মার্কিনীরা এখানে হেরে গেল- আবু রুশদ-এর মতে না। পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা তাদের লোকজনকে সরিয়ে নিয়েছে মাত্র। এটা আগে পরে নেয়া ট্রাম্প-জো বাইডেনের সিদ্ধান্ত।
আফগান সংকট মেটেনি- ড. সিনহা এম এ সাঈদ : ড. সিনহা এম সাঈদ একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক। মিডিয়ায় এসব সম্পর্কে নিয়মিত বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রাবস্থা থেকে তাকে দেখা গেছে এসব বিষয়ে কথা বলেন। প্রথম দিকে সাংবাদিকতার কাজও করেছেন। অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। বর্তমানে সেন্টার ফর গভর্নেস স্টাডিজ (সিজিএস)-এর ডিস্টিংগুইজড ফেলো। এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জটিল বটে। কে হারলো আর কে জিতলো এবার আফগানিস্তানে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা বলার সময় আসেনি। সংকটের যে সমাধান হয়ে গেছে তাও কিন্তু নয়। সেখানে শান্তি সুদূরপরাহত। পরাশক্তিরা অদৃশ্যে সক্রিয় রয়েছে। দেখতে হবে আরো।
সেখানে শান্তি আসুক- অ্যাড. আবুল কাশেম : ২০ দলীয় জোটের সদস্য বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কাশেমের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে সংক্ষেপে জানালেন- আফগানিস্তানে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই কাম্য। কারণ সেখানে মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। অতীতের মতো বিদেশি শাসন আর কাম্য নয়। ইসলাম মানে শান্তি। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মধ্যদিয়ে সবকিছু ঠিক করে নেবে এটাই কামনা করি। আফগানিস্তানে যে আফিম (মাদক)-এর ব্যাপক চাষ হয়- সেটার পেছনে কারা? উত্তরে আবুল কাশেম বলেন, সেটার জন্য গোটা তালেবানকে দায়ী করা যায় না। হয়তো একটি অংশ এর পেছনে রয়েছে।