ভাসানচর যেতে অনিচ্ছুকদের কক্সবাজারে থাকতে দিন-জাতিসংঘ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭:১২ এএম, ৬ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০১:০১ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে ‘জোরপূর্বক’ স্থানান্তরিত করা অনুচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিভেন দুজারিচ। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বৈশ্বিক বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কিত প্রতিদিনকার প্রেস ব্রিফিংয়ে মি. দুজারিচ জানান যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসংঘের আপত্তির কথা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে।
মি. দুজারিচ বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে আমরা কিছু রিপোর্ট পাচ্ছি যে, শরণার্থীদের কেউ কেউ ভাসানচরে যেতে চাচ্ছে না অথবা শুরুতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে হয়তো মত পরিবর্তন করেছে।’ ‘এরকম ক্ষেত্রে তাদের কক্সবাজারে ক্যাম্পে থাকতে দেয়া উচিত।
এছাড়া গতকালকের স্থানান্তরের সময় কিছু দুঃখজনক ছবি দেখেছি আমরা যেখানে বেদনাক্লিষ্ট মানুষদের দেখা গেছে।’ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করা হয়নি বলে গত বুধবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। মি. দুজারিচ তার বিবৃতিতে আবারো ঐ বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় আমাদের যুক্ত করা হয়নি। ভাসানচরে শরণার্থীদের স্থানান্তরের আগে সেখানে জীবনের নিরাপত্তা ও জীবিকার নিশ্চয়তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পর্যালোচনা করে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত বলে আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি।’ কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ১৬০০-এর বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গত বৃহস্পতিবার ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামে নেয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। বুধবার রাতেই এই কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে যে, ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে এমন অন্তত ১২টি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন তারা। যাদের নাম তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় স্থানান্তর হতে চান না বলে মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছেন। এই তালিকায় থাকা কিছু শরণার্থী জোর করে স্থানান্তরিত হওয়ার ভয়ে পালিয়েছেন বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ সরকার কী বলছে?
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ‘অকৃত্রিম প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখা বা ভুল ব্যাখ্যা’ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার রাতে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয় : ‘এই পর্যায়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা আশা করি, যা এই সমস্যার একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।’ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। ভাসানচরে রোহিঙ্গারা যেই ধরনের জীবনযাপন করা এবং দক্ষতা তৈরির সুযোগ পাবে, তা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর তাদের জন্য লাভজনক হবে বলে উঠে আসে বিবৃতিতে। ভাসানচরে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীসহ হাসপাতাল, যথেষ্ট পরিমাণ খাবারের মজুদ, যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য অন্তত ২২টি এনজিও’র কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে বলে উঠে আসে বিবৃতিতে।