রোজার আগেই আরেক দফা বাড়লো সব পণ্যের দাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:০৯ এএম, ১০ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১০ এএম, ৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার এখন উত্তপ্ত। পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই আরেক দফা বাড়লো অধিকাংশ পণ্যের দাম। যদিও গত দুই মাস ধরে কয়েক দফা বেড়েছে পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের কারণে এই সপ্তাহে নতুন করে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এই সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। বেড়েছে খেজুর, সয়াবিন তেল, মসলা, সবজি, ব্রয়লার মুরগি, আলু, রসুন ও পেঁয়াজের দাম।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাবে, গত এক সপ্তাহে ২১টি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানি করা আদার দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় আদার দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহে আমদানি করা আদার দাম ছিল প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১৪০ টাকা। এই সপ্তাহ পর গতকাল সেই আদা বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১৫০ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশি শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই শুকনা মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। এছাড়া পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের হিসাবও বলছে, রোজানির্ভর পণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি মসলা-জাতীয় পণ্যের মধ্যে বেড়েছে এলাচ, শুকনা মরিচ, রসুন ও আদার দাম। এদিকে মাত্র একদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। তবে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি ও লাল লেয়ার মুরগি।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। শবেবরাতের আগে থেকেই এই দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার। তবে করোনায় বিধিনিষেধ আরোপের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ টাকায় নেমে এসেছিল।
জিনিসপত্রের দাম এভাবে বাড়তে থাকায় সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে রোজার আগে জিনিসপত্রের দাম কমলেও বাংলাদেশে হচ্ছে এর ঠিক উল্টো।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরেই জিসিনপত্রের দাম বাড়ছে, রোজা শুরু হতে আর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি, এখন আবার ব্যবসায়ীরা সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও বাজারে পণ্য সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই।’
খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছেন, রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে বাজারে সেগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু তাদের বাধ্য হয়েই বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মোকামে দাম বেশি। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’
এদিকে তথ্য বলছে, গত দুই মাস আগে থেকেই রোজানির্ভর পণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এগুলোর দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে রোজানির্ভর পণ্যের দাম আরও এক দফা বাড়ানো হলো। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
বাজারের চিত্র বলছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা। অর্থাৎ গরিব মানুষকে মোটা চাল কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৫২ টাকা দিয়ে। এক সপ্তাহ আগে এই চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, যা সাত দিন আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি, যা সাত দিন আগে ছিল ৫৬ টাকা।
রাজধানীর গোপীবাগ বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম চড়া। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। যে কারণে চালের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন, মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মসলা-জাতীয় পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, যা সাত দিন আগে ছিল ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০০ টাকার মতো। তারা বলছেন, শুকনা মরিচ ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সাত দিন আগে এ মরিচের দাম ছিল ২৮০ টাকা কেজি। আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে, যা সাত দিন আগে ছিল ১১০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাঝারি মানের মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন ১২৫ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ১২১ টাকা লিটার। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। সাত দিন আগে ছিল ৩৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে সাধারণ মানের খেজুর ১২০ টাকা কেজি পাওয়া গেলেও গতকাল শুক্রবার সেই খেজুর ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অবশ্য বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে টিসিবি মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও ছোলা কম মূল্যে বিক্রি করছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবি’র পণ্য কিনতে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। আজ শনিবার থেকে রোজা উপলক্ষে খেজুরও কম মূল্যে বিক্রি করবে টিসিবি।
টিসিবি’র হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মাঝারি মানের মসুর ডাল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজ ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজ ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, খেজুর ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ, পামঅয়েল ১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচাবাজারের চিত্র বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পটল, বেগুন, শিম, ধুন্দল, বরবটি, ঢেঁড়স, লাউ, টমেটোসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় বিধিনিষেধ আরোপের কারণে সবজির গাড়ি কম আসায় দাম বেড়েছে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সজনের ডাটার দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে সজনে ডাঁটার কেজি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে একমাত্র এই সবজিটির দাম কমেছে। বাকি সব সবজির দামই বেড়েছে।
রাজধানীর মানিকনগর বাজারের ইয়াকুব আলী বলেন, ‘সব সবজির দাম এখন চড়া। বেগুন, পটল, বরবটি, ঢেঁড়সের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে।’
পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শিমের দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ধুন্দল, চিচিঙা কিনতে কেজিতে ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।