শেয়ারবাজারে বড় ধস, একদিনে নেই ১৫ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৭ এএম, ৫ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩০ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামাল দিতে এক সপ্তাহের লকডাউন দিয়েছে সরকার। এতে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। যার ফলস্বরূপ দিনের লেনদেন শেষে বড় ধসের ঘটনা ঘটেছে দেশের শেয়ারবাজারে। এই ধসের মধ্যে পড়ে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনেই ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে নেই হয়ে গেছে। এর আগে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপের শুরুতেও গত বছর শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই সংবাদে ৯ মার্চ ভয়াবহ ধস নামে শেয়ারবাজারে। একদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ২৭৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। আর তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায় ১৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। বড় ওই ধসের পরও শেয়ারবাজরে ধস চলতে থাকে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা) নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় টানা ৬৬ দিন বন্ধ রাখা হয় শেয়ারবাজারের লেনদেন।
তবে বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর গত বছরের ৩১ মে শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন শুরু করেন। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাবও পড়ে। কিন্তু করোনার শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই এখন নতুন করে আবার ধাক্কা খেল শেয়ারবাজার। গতকাল রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই দেশজুড়ে এক সপ্তাহের লকডাউনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৮৫ পয়েন্ট পড়ে যায়। শেয়ারবাজারে দেখা দেয়া এই বড় দরপতনের মধ্যেই এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানান, লকডাউনের মধ্যেও শেয়াবাজারে লেনদেন বন্ধ হবে না। ব্যাংকের লেনদেনের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে শেয়ারবাজারে লেনদেন চলবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন আশ্বাসও বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক দূর করতে পারেনি। ফলে শুরুর বড় দরপতনের ধারা চলমান থাকে। এর মধ্যেই দুপরে লকডাউন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর শেয়ারবাজারে দরপতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ বাড়ালে অনেক কোম্পানির ক্রেতা সঙ্কট দেখা দেয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সূচকের ওপরে। ফলে দেখতে দেখতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় দুই’শ পয়েন্ট নেই হয়ে যায়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পারে মাত্র ৭টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। আর ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। যা আগের কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ছিল ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে। বড় অঙ্কের বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে গত বছরের ৯ মার্চের পর সূচকটির সব থেকে বড় পতন হল।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৮২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০১ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এক শতাংশের ওপরে দাম কমেছে ২৩৮টির। এর মধ্যে ৪১টি দিনের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। আর ৪ শতাংশের ওপরে দাম কমেছে ১৪৭টির। ১৫০টির দাম কমেছে ৫ শতাংশের ওপরে। এদিকে সূচকের বড় পতনের দিনে ডিএসইর লেনদেন হয়েছে ৫২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৬৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৪২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৪টির। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।