রমজানের আগেই বাজারে নিত্যপণ্যের উত্তাপ বৃদ্ধি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩৯ এএম, ১৫ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৩৯ পিএম, ১৫ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪
নিত্যপণ্যের বাজারে এখনই রমজানের উত্তাপ শুরু হয়েছে। ছোলা থেকে শুরু করে ভোজ্যতেল, খেজুর, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, গরু ও মুরগির মাংস, গুঁড়া দুধ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। অসাধু সিন্ডিকেট গত দুই মাসে ধাপে ধাপে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আর এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। একদিকে করোনায় কর্মসংকোচন, অন্যদিকে পণ্যমূল্য বেশিÑ সব মিলিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে।
রমজানের বাকি আর এক মাস। প্রতি বছরই রমজান মাস ঘিরে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের ইচ্ছামতো নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও একই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। পেঁয়াজ, মুরগি, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে দেদার। দুই সপ্তাহ আগে দেশি মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা। আর রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। একই অবস্থা ব্রয়লার মুরগির। দুই সপ্তাহ আগে দাম ছিল ১৩০ টাকা কেজি, আর এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬০ টাকা। লেয়ার মুরগির দাম ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। আর পাকিস্তানি বা সোনালি মুরগির দাম চাওয়া হচ্ছে ৩৬০ টাকা, যা এতদিন বিক্রি হচ্ছিল ২৮০-৩০০ টাকায়। প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিল গেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা ও খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বিভিন্ন মুদি দোকান প্রতি কেজি সয়াবিন তেল ১৩০ টাকায় বিক্রি করছে।
এছাড়া প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিল গেটে ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকার সব স্তরের তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও মানছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি দোকানে প্রতি লিটার ১১০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১১৩ টাকায়। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে ৩ টাকা বেশি রাখছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। প্রতি বছরের মতো এবারও সক্রিয় অসাধু সিন্ডিকেট। রমজান সামনে রেখে তারা জানুয়ারি থেকেই রমজানে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে।
নিত্যপণ্যের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলা সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ১৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ১০ টাকা, মুগডাল ১০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি গরুর মাংস দুই মাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫ টাকা বেড়েছে। গুঁড়া দুধ কোম্পানিভেদে কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার এ চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাসিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে।
এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও পণ্যটি বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুই মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজি ছোলা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন গত বছরের তুলনায় লিটারে দাম ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেজি খেজুর বছর ব্যবধানে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। মুগডাল কেজিতে বছরে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪ দশমিক ৫৫ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুঁড়া দুধ বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হয় নয়াবাজারের তুহিন স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. শাহিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্তে¡ও গত কয়েক বছর ধরে রমজান মাস আসার দুই মাস আগ থেকেই পাইকারি বাজারে রমজানে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমরা বেশি দরে কিনি এবং বেশি দামে বিক্রি করি। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ে মিল পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে। তদারকি সংস্থা যদি দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে চায়, তাহলে মিল পর্যায়ে কঠোর তদারকি করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, রমজান এলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে সরকারের এখন থেকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। কারণ বাজারে পণ্যের দর নিয়ে যে কারসাজি শুরু হয়েছে, তা এখনই থামানো না গেলে ভোক্তারা রমজান মাসে আরও বিড়ম্বনায় পড়বে। তাই অযৌক্তিকভাবে কেউ পণ্যের দাম বাড়ালে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজানের সময় পণ্যের দাম নিয়ে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। কয়েকটা আইটেম নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়। কিছু জিনিস আমাদের রয়েছে যেগুলো রমজানের পণ্য। যেমন : ছোলা, খেজুর, ডাল এসব জিনিস আমদানি করতে হয়। এগুলো টিসিবি’র মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি করা হচ্ছে। সবকিছু বুক করা হয়েছে। আশা করছি সবকিছু এসে যাবে। রমজানের সময় আমাদের সমস্যা যেন না হয় তার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।