ইউসিবি ব্যাংকের অনিয়ম: হাজার কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে বন্দকি মাত্র ৮০ কোটির সম্পদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:১২ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
তিনটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি হওয়া ১,০৬৭ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তির নিলাম বিক্রয়ের দরপত্র ডেকেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পিএলসি। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম।
ইউসিবির কারওয়ান বাজার শাখায় আদনানের দুটি প্রতিষ্ঠান এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্টস (বিডি) ও এডব্লিউআর রিয়েল এস্টেটের মোট খেলাপি ঋণ ৬৮৭ কোটি টাকা। এছাড়া একই শাখায় বাংলা-ইউকে এগ্রো প্রোডাক্টসের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৮০ কোটি টাকা।
কিন্তু নিলামে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে জানিয়েছে ব্যাংকের একটি সূত্র।
একজন কর্মকর্তা বলেন, আদনানের দুটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে গুলশানে অবস্থিত ২৭ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস বন্ধক রাখা হয়েছে।
তবে এই সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৬০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। এর ফলে ইউসিবি ব্যাংককে বড় অঙ্কের ঘাটতি পূরণ করতে হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর-এর (আরজেএসসি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আদনান ইমাম এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্টস ও এডব্লিউআর রিয়েল এস্টেট উভয় কোম্পানির চেয়ারম্যান। একটি প্রতিষ্ঠানে তার বাবার নাম চৌধুরী ফজলে ইমাম ও অপরটিতে এ কে মঈনুদ্দিন উল্লেখ করা হয়েছে।
দুই প্রতিষ্ঠানেরই মূলধন ১০ কোটি টাকা করে।
এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্টস ঢাকার বনানীর ২৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এ আর টাওয়ার-এ নিবন্ধিত। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন নাসির। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছেন চৌধুরী ফজলে ইমাম (৮০ হাজার শেয়ার), মোহাম্মদ আদনান ইমাম (১.৮০ লাখ শেয়ার) ও তার স্ত্রী নীলুফার ইমাম (১.৪০ লাখ শেয়ার)।
এডব্লিউআর রিয়েল এস্টেট উত্তরার সেক্টর-০৭-এর সৈয়দ গ্র্যান্ড সেন্টারে নিবন্ধিত। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন নাসির (এক্স-অফিসিও)। এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছেন চৌধুরী ফজলে ইমাম (২৫ হাজার শেয়ার) ও মোহাম্মদ আদনান ইমাম (২৫ হাজার শেয়ার)।
বাংলা-ইউকে এগ্রো প্রোডাক্টস :
আরজেএসসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলা ইউকে এগ্রো প্রোডাক্টসের নিবন্ধিত মূলধন মাত্র ১ কোটি টাকা ও প্রতি শেয়ারের দাম ১০ টাকা।
কোম্পানিটি ছয়জন পরিচালকের মালিকানাধীন—মেজবাহ উদ্দিনের শেয়ার সংখ্যা ৪ হাজার, শাহাদাত হোসেন তৌফিকির শেয়ার সংখ্যা জানানো হয়নি, জাহিদুল ইসলামের শেয়ার ১৫ হাজার, রোকেয়া ইসলামের শেয়ারসংখ্যা ৮ হাজার, বোরহান উদ্দিন চৌধুরীর শেয়ারসংখ্যা ৮৫ হাজার ও আমের রাসুলের শেয়ার ৮৭ হাজার ৫০০টি।
কোম্পানিটির নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে গাজীপুরে ১৯৭ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা।
ইউসিবির কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়েছে সিআইডি
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট গত ৮ ডিসেম্বর ইউসিবি ব্যাংকের কাছে ৬৪ জন ঋণগ্রহীতা ও ব্যাংকের ৩০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে এ চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা আদায় এবং অনিয়মিত ঋণ অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন।